বিনোদন ডেস্ক : সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর পর থেকেই নানা মহলে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে এটা আত্মহত্যা নাকি ‘পরিকল্পিত খুন’? যদিও প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে সুশান্ত আত্মহত্যাই করেছেন। এর মধ্যেই সোমবার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পুলিশের হাতে আসে। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, সুশান্তের মৃত্যু হয়েছে গলায় ফাঁস লাগানোর কারণে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে। কিন্তু কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি সুশান্তের ঘর থেকে। এখানেই দানা বেঁধেছে রহস্য।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে যা-ই থাকুক, মুম্ব্ই পুলিশ সুশান্তের মৃত্যুর তদন্ত নিয়ে কোনও রকম ফাঁক রাখতে চাইছে না। সে কারণেই রাসায়নিক বিশ্লেষণের জন্য তাঁর ভিসেরার নমুনা সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবরে জানা গেছে, সেই নমুনা ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে। বাবা কৃষ্ণকুমার সিংহের কাছে ছেলের মৃত্যুর খবর রবিবারই পৌঁছে গিয়েছিল। ওই দিন রাতেই সুশান্তের পরিবারের লোকেরা পটনা থেকে মুম্বাইয়ে পৌঁছান। মুম্বইতেই আজ তাঁর অন্ত্যেষ্টি হবে।
সুশান্তের আকস্মিক মৃত্যুতে গোটা দেশ স্তম্ভিত। প্রশ্ন উঠছে এক জন সফল অভিনেতাএই আত্মহননের পথ কী ভাবে বেছে নিতে পারলেন? যদিও মানসিক অবসাদের বিষয়টি বিভিন্ন সূত্র থেকে সামনে এসেছে। সুশান্ত মানিসক অবসাদে গত ছ’মাস ধরে ভুগছিলেন, এমনটা উল্লেখ করা হয়েছে পুলিশের প্রাথমিক রিপোর্টেও। বেশ কিছু জিনিস সুশান্তের ঘর থেকেও উদ্ধার করেছে পুলিশ। কিন্তু মেলেনি সুইসাইড নোট। ফলে রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে অভিনেতার মৃত্যু নিয়ে। সুশান্তের ঝুলন্ত দেহ রবিবারই বান্দ্রার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়। সুশান্ত হাসিখুশি কখনওই আত্মহত্যা করতে পারে না, সুশান্তের আত্মীয়-পরিজন থেকে বন্ধুরা এমনটাই দাবি করছেন। সুশান্তের মামা আরসি সিংহ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “কোনও ভাবেই আমরা এটা মানতে পারছি না যে সুশান্ত আত্মহত্যা করেছে। কোনও ষড়যন্ত্র আছে এর পিছনে। খুন করা হয়েছে ওকে। পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করুক।” আরও অভিযোগ তাঁর, “সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা সাইলানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলা হলেও ওটা আসলে আত্মহত্যা নয়। খুন করা হয়েছিল দিশাকেও।” রাজীবনগরের লোকেরাও সুশান্তের মৃত্যুটা মানতে পারছেন না। সুশান্তের শৈশব কেটেছে পটনার রাজীব নগরেই। গোটা এলাকাটা পাড়ার ছেলের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ। সুশান্তের বাবা রাজীবনগরের ঐ বাড়িতে একা থাকেন। রয়েছে এক জন কেয়ারটেকারও। সুশান্তকেও দীর্ঘ দিন ধরেই লক্ষ্মী নামে ওই কেয়ারটেকার দেখে এসেছেন।
তিনি বলেন, “বাবা-ছেলের সঙ্গে প্রায় দিনই ফোনে কথা হত। সুশান্তের খুব মানসিক চাপে রয়েছে, এমন কোনও লক্ষণ ধরা পড়েনি। বা জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ।” তিনি আরও দাবি করেন, “এই প্রাণবন্ত ছেলেটা কী করে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারল, বিশ্বাসই করতে পারছি না ? সুশান্ত সব সময়েই অন্যকে উত্সাহ জোগাত।”
রাজীবনগরের প্রতিবেশী এক তরুণী আবার বলেন, “সুশান্ত বেশ কয়েক দিন আগেই গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে সে সময় দেখা হয়েছিল। সুশান্তের মধ্যে একটা পজিটিভিটি ছিল। ও আত্মহত্যা করেছে ভাবতেই পারছি না। কেন এমনটা করল সে, সুশান্তের মৃত্যুর পর থেকে বার বারই আমাদের সকলের মনে একটাই প্রশ্ন আসছে?” সুশান্তের মৃত্যুতে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন সাংসদ লাভলি আনন্দও। সুশান্তের দূর সম্পর্কের আত্মীয় লাভলি বলেন, “ভাল করে তদন্ত হওয়া উচিত। কয়েক দিন আগেই সুশান্তের ম্যানেজার দিশা সালিয়ান আত্মহত্যা করেন। এ বার আমাদের ছেলেটা আত্মহত্যা করল। এটা কাকতালীয়, বিশ্বাস করি না।”