বুধবার, ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চীনা স্বার্থের বলি হচ্ছে নেপালের মতো দেশগুলোর দুর্নীতিগ্রস্ত নেতারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশগুলোতে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করছে চীন। কমিউনিস্ট এই দেশটির এমন চলছাতুরীর শিকার এশিয়ার অন্যতম ক্ষুদ্রতম দেশ নেপাল। গ্লোবাল ওয়াচ অ্যানালাইসিসের এক নিবন্ধে এমনটাই দাবি করা হচ্ছে। নিবন্ধটির লেখক রোল্যান্ড জ্যাকার্ড। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, চীনা সংস্থাগুলো অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশগুলোতে কেবল ব্যবসায়িক স্বার্থকেই এগিয়ে নেয় না। দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিশ্চিত করতে দেশটির রাজনীতিতে গোপনীয়তার সঙ্গে প্রবেশ করে চীন। নিবন্ধটিতে অভিযোগ করে বলা হয়, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির ব্যক্তিগত সম্পদ কয়েক বছর ধরে বাড়ছে। আরো বলা হয়, নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির এই নেতা দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে লুকিয়েও ছিলেন।

রোল্যান্ড জ্যাকার্ড লেখেছেন, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বুলেভার্ড জর্জেস-ফ্যাভন এলাকার মিরাবাউদ ব্যাংকে ওলির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এই তথ্য জানা গেছে। আর ওই হিসাবে দীর্ঘমেয়াদী আমানত ও শেয়ার বিনিয়োগ হিসেবে সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন ডলার রাখা হয়েছে। ওলি ও তাঁর স্ত্রী রাধিকা শাক্য প্রতি বছর প্রায় অর্ধ মিলিয়ন ডলার সেখানে রাখতেন। চীনাদের সহায়তায় ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে ওলির দুর্নীতির চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে নিবন্ধটিতে। ২০১৫-১৬ সালের দিকে প্রথমে ক্ষমতার মসনদে বসেন ওলি। সে সময়ও তিনি চীনা রাষ্ট্রদূতের সহায়তায় দুর্নীতিতে জড়ান বলে অভিযোগ। নিবন্ধটিতে বলা হয়, তৎকালিন চীনা রাষ্ট্রদূত ওয়া চুনতাইয়ের সহায়তায় তিনি কম্বোডিয়ায় টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন।

ওলির ঘনিষ্ঠ বিশ্বাসী নেপালি ব্যবসায়ী অ্যাং শেরিং শেরপা এই চুক্তিটি চূড়ান্ত করেছিলেন। কম্বোডিয়ান প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের হস্তক্ষেপে এই চুক্তিটি করা হয়। বো জিয়াংয়ের ফোম পেনের শীর্ষস্থানীয় চীনা কূটনীতিক তাদের এই কাজে সহায়তা করেন। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরেও ওলির বিরুদ্ধে একই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। এমনকি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মসনদে থেকে ওলি চীনা কম্পানিকে প্রকল্প দেওয়ার জন্য সরকারের বিধিবিধানকে লঙ্ঘন করেন। ২০১৮ সালের এক ‘ডিজিট্যাল অ্যাকশন রুম’ স্থাপনে জন্য চীনা কম্পানি হুয়াওয়েকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কোনো ধরনের প্রতিযোগিতামূলক নিলাম ছাড়াই তাদের এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠান নেপাল টেলিকমিউনিকেশনের এই ধরনের দক্ষতার থাকার পরও চীনা কম্পানিকে দায়িত্ব দেয় ওলি প্রশাসন।

নিবন্ধটিতে দাবি করা হয়, পরে তদন্তে বের হয়ে আসে তলের বিড়াল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ওলির রাজনৈতিক উপদেষ্টা বিষ্ণু রিমালের ছেলে আর্থিক লাভের জন্য এই চুক্তির জন্য প্রশাসনকে চাপ দেয়। নিবন্ধটির লেখক রোল্যান্ড জ্যাকার্ড প্রকল্প দুর্নীতির আরো একটি চিত্র সামনে নিয়ে আসেন। তার দাবি, ২০১৯ সালে মে মাসে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই চীনা কম্পানিকে প্রকল্পের দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয়। রেডিও অ্যাক্সেস নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য হংকংভিত্তিক চীনা টেলিকমিউনিকেশন কম্পানির সঙ্গে একটি চুক্তি করে নেপাল টেলিকমিউনিকেশন। চীনের টেলিকম সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জেডটিইয়ের সঙ্গেও আরো একটি চুক্তি সই করে নেপাল টেলিকমিউনিকেশন। প্রতিষ্ঠানটিতে কোর ফোরজি নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য এই চুক্তি করা হয়। প্রকল্প দু’টির মূল্য নেপালি রুপিতে (এনআর) প্রায় ১৯ বিলিয়ন।

এদিকে, করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর জুনে নেপালে বিক্ষোভ শুরু হয়। চীন থেকে আমাদানি করা করোনার প্রতিরক্ষামূলক গিয়ার কেনার ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ, করোনা পরীক্ষা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে ওই বিক্ষোভ শুরু হয়। গ্লোবাল ওয়াচ অ্যানালাইসিসে বলা হয়, করোনা মহামারি নিয়ে খরচ হওয়া অর্থের সরকারি হিসাব চান তারা। ওই সময় ১০ মিলিয়ন নেপালি রুপি খরচ হয় বলে বলা হয় নিবন্ধটিতে। এরই মধ্যে নেপালের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং অলির ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন প্রবীণ উপদেষ্টার বিরুদ্ধে মেডিক্যাল সরঞ্জাম কেনায় ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে দু’টি তদন্ত চলছে। এমন এক পরিস্থিতিতে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিল করছে চীন। তবে কে পি শর্মা ওলি এবং তার চীনা ‘বন্ধু’দের জন্য একটি জয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করা হয় গ্লোবাল ওয়াচ অ্যানালাইসিসের নিবন্ধে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিক টাইমস।

এই বিভাগের আরো খবর