সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খালেদার উদ্দেশে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক নিউজ : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সরাসরি জড়িত ছিল বলে আবারও মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে হত্যার জন্যই এই হামলা ছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনিই তো মারার জন্য চেষ্টা করেছেন, ব্যর্থ হয়েছেন।’

গ্রেনেড হামলার ঘটনার ১৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় দলের ও অনুষ্ঠানের সভাপতি শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আলোচনাসভায় যোগ দেন। এর আগে দলের পক্ষ থেকে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয় আমাকে এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যার জন্য। এমনকি আমেরিকাতে আমার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেও প্রতিক্রিয়াশীলরা ক্ষান্ত হয়নি। আমাকে ও আমার পরিবারকে বারবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের সঙ্গে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের খুনিদের যোগাযোগ ছিল, তা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট। আর তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ঘটায়। এর সঙ্গে তাঁর ছেলে তারেক রহমান জড়িত ছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সভ্য দেশ হলে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ও অন্যরা ছুটে আসত আহতদের উদ্ধার করতে। তাঁদের হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে যেত এবং চিকিৎসা করাত। কিন্তু এখানে কী হলো—আমাদের উদ্ধারকারী নেতাকর্মীদের ওপর উল্টো লাঠিচার্জ এবং টিয়ার শেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।’ তিনি বলেন, গ্রেনেড হামলা নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু খালেদা জিয়া তা করতে দেননি। দেশে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল আর সংসদে সেটা নিয়ে কোনো আলোচনাই হলো না! খালেদা জিয়া বলে দিলেন, ‘উনাকে (শেখ হাসিনা) আবার কে মারতে যাবে!’

খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন তো বলতে হয় যে আপনিই তো মারবেন। চেষ্টা করেছেন, ব্যর্থ হয়েছেন, সেই জন্য আর পারছেন না। সেই দিন এই রকম তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলে আমাদেরকে কোনো কথা বলতে দেয় নাই এই হামলা সম্পর্কে। অথচ আমাদের নেতাকর্মীরা, পার্লামেন্ট মেম্বাররা (তখন) আহত অবস্থায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন, মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।’

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ড বিএনপির অভ্যাস। তারা দেশের স্বাধীনতা ও স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না।

বিএনপি সরকার ‘দুর্নীতির বিষবৃক্ষ’ রোপণ করে গেছে এবং দেশ এখন এর ফল ভোগ করছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশ এখন বিএনপি সরকারের দুঃশাসনকালে রোপণ করা সেই বিষবৃক্ষের মূল্য দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের একের পর এক গ্রেপ্তার করছে তাঁর সরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা সংকটকালে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। পুলিশ, বিজিবি ও প্রশাসনের সবাই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আর কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি!’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ যদি ডিজিটাল বাংলাদেশ না হতো তাহলে এভাবে আলোচনা করা হয়তো সম্ভব হতো না। সে জন্য আমি জয়কে ফোন করেছিলাম এবং তাকে ধন্যবাদ দিয়েছি যে যদি ডিজিটাল করে না দিতে তাহলে হয়তো এইভাবে ভার্চুয়ালি আলোচনা করা সম্ভব হতো না।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আলোচনাসভায় সূচনা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। অনুষ্ঠানের শুরুতে ২১ ও ১৫ই আগস্টের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এই বিভাগের আরো খবর