ডেস্ক নিউজ : সরকারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় নতুন নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এখন থেকে প্রতি তিন মাস পর বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাজেট বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় এই প্রথম ব্যর্থতা, অপরিকল্পিত ঋণ নেওয়ার কারণ, বাজেট শৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এই পরিপত্রে বলা হয়েছে, সরকারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্যহীনতার একটি প্রধান কারণ রাজস্ব আহরণ ও সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকা। জাতীয় সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত বাজেট সুষ্ঠুভাবে সময় মতো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগাম পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন সম্ভব হলে অপরিকল্পিত সরকারি ঋণ এড়ানো এবং ঋণজনিত ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানো সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা ও প্রান্তিক শেষ হওয়ার পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাজেট বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন অর্থ বিভাগে পাঠানোর জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে।
অর্থবছরের শেষ দিকে ব্যয়ের হিড়িক পড়ে উল্লেখ করে এতে বলা হয়েছে, বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাজেট বাস্তবায়ন অর্থবছরের প্রথমার্ধে চলে ধীরগতিতে। অর্থবছরের শুরুর দিকে বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে যেমন ধীরগতি দেখা যায়, তেমনি বেতন-ভাতা ছাড়া অন্যান্য খাতের বিপরীতে ব্যয়ের পরিমাণও কম থাকে।
তবে অর্থবছরের শেষ দিকে বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মেরামত, সংরক্ষণ, নির্মাণ ও পূর্ত এবং মালপত্র ক্রয়/সংগ্রহের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয়ের গুণমান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। বরং বছরের শেষে এসে সরকারকে অপরিকল্পিত ঋণের দায় নিতে হয়। ফলে বাজেট শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যায় না।
এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাজেটের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অর্থবছরের শুরুতে একটি বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ, যথাযথভাবে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং বাজেট বাস্তবায়নের নিয়মিত পরিবীক্ষণ করা প্রয়োজন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ যাতে বাজেট বাস্তবায়নে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও পদ্ধতিসহ ফরম করা হয়েছে। সে নীতিমালা ও পদ্ধতি অনুসরণে বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা জরুরি।
রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে কোয়ার্টারভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করতে হবে উল্লেখ করে নীতিমালায় বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন খাতের বিপরীতে ধার্য করা লক্ষ্যমাত্রার ভিত্তিতে কোয়ার্টারভিত্তিক রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। কোনো খাতের রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে মৌসুমভিত্তিক কমবেশির রেকর্ড থাকলে তা বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট আইটেমের বিপরীতে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।
ব্যয়ের পরিকল্পনায় পরিপত্রে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, বেতন-ভাতাসহ যেসব আইটেমের বিপরীতে বরাদ্দকৃত অর্থ সাধারণত সমানুপাতিক হারে পরিশোধ/ব্যয়িত হয়ে থাকে সেসব আইটেমের বিপরীতে কোয়ার্টারভিত্তিক ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা সমানুপাতিক হারে নির্ধারণ করা যেতে পারে। তবে কর্মকর্তাদের বেতনের ক্ষেত্রে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির আর্থিক সংশ্লেষ বিবেচনায় রাখতে হবে।
প্রত্যেক মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে আগের মাসের সব ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে হবে। সে অনুযায়ী প্রত্যেক কোয়ার্টারে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ দেখাতে হবে। অর্থবিভাগের পরিপত্রটি সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তরগুলোকে যথাযথভাবে পালন করতে বলা হয়েছে।