আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হোটেল, রেস্তোরাঁ ও জিমন্যাসিয়াম ফের চালু হলেই দেখা যাচ্ছে কোভিড সংক্রমণ আরও বাড়ছে। গত মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত আমেরিকার বিভিন্ন শহরে গবেষণা চালিয়ে এই উদ্বেগজনক তথ্য পেয়েছেন স্ট্যানফোর্ড ও নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’-এর সাম্প্রতিক সংখ্যায়।
গবেষকরা ওই তিন মাসে আমেরিকার বিভিন্ন শহরের ৯ কোটি ৮০ লাখ মানুষের মোবাইল ফোনে তাদের গতিবিধি সংক্রান্ত ডেটা সংগ্রহ করেছিলেন। সেখান থেকেই গবেষকরা জানতে পেরেছেন আমেরিকার ওই শহরগুলোতে গত মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে মোবাইল ফোনের ওই সব গ্রাহক কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন, তারা সেসব জায়গায় কতক্ষণ থেকেছিলেন, তারা কতজনের সঙ্গে মিশেছিলেন এবং কাদের কাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বা তাদের কাছাকাছি পৌঁছেছিলেন।
সেসব তথ্যের ভিত্তিতে গবেষকরা একটা পূর্বাভাস দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন পরবর্তীকালে ওসব শহরে কোভিডে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বেড়ে কোথায় পৌঁছতে পারে। পরে দেখা গেছে, সেই পূর্বাভাস ৮৫ শতাংশ সঠিক প্রমাণিত হয়েছে।
গবেষকরা দেখেছেন, মহামারিতে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আমেরিকার যে শহরগুলোর যে যে এলাকায় হোটেল, রেস্তোরাঁ ও জিম ফের চালু হয়েছে বেশি সংখ্যায়, আর সেই হোটেল, রেস্তোরাঁ ও জিমগুলোতে যে যে এলাকায় ভিড় বেশি হয়েছে সেসব এলাকাতেই পরে কোভিড সংক্রমণের সংখ্যা বেশি বেড়েছে।
গবেষণাটি পর্যাপ্ত তথ্যনির্ভর বলেই সেটি ‘নেচার’-এর মতো বিজ্ঞান-জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
শিকাগো শহরের কথাই ধরা যাক। গবেষকদের পূর্বাভাস ছিল শিকাগোয় যদি সব হোটেল, রেস্তোরাঁ ও জিম আগের মতোই পূর্ণ সময়ের জন্য ফের চালু হয় তাহলে শহরে অন্তত আরও ৬ লাখ মানুষ সংক্রমিত হবেন কোভিড ভাইরাসে, যা অন্যান্যভাবে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ার ৩ গুণ।
গবেষণাপত্র জানাচ্ছে, শিকাগো শহরের ১০ শতাংশ জায়গায় সেই পূর্বাভাস ৮৫ শতাংশ সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, এই গবেষণা আগামী দিনে কোন কোন এলাকায় কীভাবে কত সংখ্যায় ধাপে ধাপে হোটেল, রেস্তোরাঁ ও জিম ফের খোলা যেতে পারে, তাতে জমায়েতের ওপর কতটা কী কড়াকড়ি থাকা প্রয়োজন তার রূপরেখা তৈরি করতে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।
গবেষণাপত্রটি এও জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণকে পুরোপরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে লকডাইন পর্বের মতো হোটেল, রেস্তোরাঁ, জিমগুলোকে একেবারে বন্ধ রাখার প্রয়োজন নেই। বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরা, কম জমায়েত ও সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চললে ওই সংখ্যায় রাশ টানা সম্ভব।
গবেষণা জানিয়েছে, বেশি আয়ের মানুষের চেয়ে অল্প আয়ের মানুষদেরই সংক্রমিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি। কারণ, রুটি-রুজি বা অন্যান্য প্রয়োজনে অল্প আয়ের মানুষদের অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরি করতে হয়, মিশতে বা যেতে হয় অনেক বেশি লোকের জমায়েতে।