সোমবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পদ্মা সেতুতে পারাপার অপেক্ষা আগামী ডিসেম্বরের

ডেস্ক নিউজ : পদ্মা বহুমুখী সেতু অবয়ব পাওয়ার পর যানবাহন ও ট্রেন চলাচল করার জন্য স্বপ্নের এই সেতু কবে নাগাদ প্রস্তুত হবে সেটা জানার আগ্রহ সবার মধ্যে। কিন্তু সব মিলিয়ে সেতুর কাজ এখনো অনেক বাকি। ফলে আপাতত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। আগামী বছরের ডিসেম্বর মাসে যানবাহন চলাচলের জন্য সেতু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আছে সরকারের। তবে সেটা সম্ভব হবে কি না তার নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, সেতুর নির্মাণ ঠিকাদার চায়না ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত সময় চেয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যেদিন পদ্মা সেতু যানবাহনের জন্য উন্মুক্ত করা হবে সেদিন ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালু করারও পরিকল্পনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজের এখনো অনেক বাকি রয়েছে। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ট্রেন পুরোপুরি চালুর জন্য সম্ভাব্য তারিখ ধরা হয়েছে২০২৪ সাল। পদ্মা সেতু কবে নাগাদ চালু হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগামী বছর ডিসেম্বর নাগাদ যানবাহন ও রেল চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু উন্মুক্ত করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। তবে এ ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় জড়িত, যেমন—বন্যা ও করোনার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা কাজে কিছুটা পিছিয়েছি। যদিও আমরা কাজ বন্ধ করিনি। তবে গতি তো ধীর করতে হয়েছে। এমন কোনো দুর্যোগ এলে আসলেই সম্ভাব্য তারিখ ঠিক রাখা যায় না। এ ছাড়া সেতুর ঠিকাদার কম্পানি আরো কিছু সময় চাচ্ছে। তবে আমরা এতটা দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছি যে সম্ভাব্য তারিখ আগামী ডিসেম্বর মাসই যেন ঠিক রাখতে পারি।’

এখনো যেসব কাজ বাকি : পদ্মা সেতুর সড়ক ও রেলপথের স্লাব বসানোর কাজ চলছে। এর মধ্যে সড়কের দুই হাজার ৯১৭টি স্লাবের মধ্যে বসানো হয়েছে এক হাজার ২৮৫টি। বাকি রয়েছে এক হাজার ৬৩২টি স্লাব। স্লাব স্থাপনের পর করতে হবে কার্পেটিং অর্থাৎ পিচ ঢালাইয়ের কাজ। রেলপথের জন্য প্রয়োজন দুই হাজার ৯৫৯টি স্লাব। এর মধ্যে বসানো হয়েছে এক হাজার ৯৩০টি। বাকি রয়েছে এক হাজার ২৯টি স্লাব।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেতুর ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম জনপদে যাচ্ছে গ্যাস ও অপটিক্যাল ফাইবার। এগুলোর লাইন এখনো স্থাপন করা হয়নি। সেতুর ওপর থাকবে বিদ্যুৎ লাইন। এ কাজও এখনো হয়নি। বাগেরহাটের রামপাল ও পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ লাইন এসে মিলিত হবে রাজধানীর রামপুরায় জাতীয় গ্রিডে। জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে পদ্মা সেতুতে।

সেতুসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রামপাল ও পায়রা থেকে জাতীয় গ্রিড পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। ওই বিদ্যুৎ লাইনের কাজও করছে মূল সেতুর ঠিকাদার চায়না মেজর ব্রিজ কম্পানি। পদ্মা সেতুতে বিদ্যুৎ আসার পর সেতু ও সেতুর উভয় তীরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এলাকাজুড়ে সড়ক বাতি স্থাপন করা হবে। সে কাজ এখনো হয়নি। এ ছাড়া মূল সেতুতে সড়ক বাতি ছাড়াও আর্কিটেকচারাল বাতি থাকবে। থাকবে স্থায়ী আলোকসজ্জা।

কর্মকর্তারা জাানিয়েছেন, মূল সেতুর উভয় প্রান্তে রয়েছে ৩.১৫ কিলোমিটার সংযোগ সেতু (ভায়াডক্ট)। এই সংযোগ সেতুর জন্য প্রয়োজন হবে ৪৮৪টি সুপার গার্ডার। এরই মধ্যে ৩১০টি স্থাপন করা হয়েছে। বাকি রয়েছে ১৭৪টি। সেতুর সংযোগ সড়ক, টোল প্লাজাসহ সার্ভিস এরিয়ার কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। অবশ্য নদীশাসনের কাজ এখনো বাকি আছে। এ পর্যন্ত নদীশাসনের কাজ হয়েছে ৭৫.৫০ শতাংশ। মূল সেতুতে মোট ৪১টি ট্রাসের প্রয়োজন। এর মধ্যে ৩৯টি বসানো হয়েছে। বাকিগুলো আজকালের মধ্যে বসানো হবে। এ ছাড়া বাকি রয়েছে সেতুর রেলিং নির্মাণের কাজ।

সেতুর স্প্যান বা ইস্পাতের কাঠামোর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রেলপথের নকশা জটিলতা এখনো কাটেনি। জাজিরা পয়েন্টে নির্মিত রেললাইন যে উচ্চতায় হচ্ছে, তাতে সংযোগ সড়ক দিয়ে সেতুতে ওঠার সময় লরি আটকে যাবে। একটি খুঁটির কারণে এই সমস্যা হয়েছে। রেল প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, ওটা ঠিক করার জন্য নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে বলা হচ্ছে। দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে বলে রেল প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেল সংযোগ প্রকল্প চীনের সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি) প্রকল্পটির কাজ করছে।

রেললাইন স্থাপনের কাজ অর্ধেকের বেশি শেষ হলেও ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত এবং পদ্মা সেতুর পর থেকে রেললাইনের কাজের এখনো অনেক বাকি রয়েছে। রেল প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, সার্বিকভাবে কাজ হয়েছে ৩১ শতাংশ।

এই বিভাগের আরো খবর