নাক ডাকা – আপাতদৃষ্টিতে অনেক হাস্যকর মনে হলেও এটা বেশ গুরুতর একটি সমস্যা। নাক ডাকা নিয়ে নানান ছোটখাট সমস্যা তো হয়ই, দাম্পত্য কলহ পর্যন্ত হয়! তাই নাক ডাকাকে মোটেও হেলাফেলার দৃষ্টিতে দেখবেন না। নারীদের তুলনায় পুরুষরাই নাক ডাকেন বেশি। নাকডাকায় নাক কিন্তু ডাকে না! এই ডাক বা শব্দ তৈরি হয় টাকরা বা তালু বা প্যালেটের নরম অংশের কম্পন থেকে। নাক কীভাবে ডাকে তা জানতে হলে আমাদের শ্বাসপথ সম্পর্কে একটু ধারণা দরকার।
নাক বা মুখ দিয়ে আমরা যে বাতাস গ্রহণ করি তা ফ্যারিংস বা গলবিল হয়ে ল্যাংরিস বা স্বরযন্ত্র হয়ে প্রবেশ করে ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালিতে। সেখান থেকে ব্রনকাস বা ক্লোমনালি হয়ে ব্রনকিওল বা ক্লোমনালিকা হয়ে পৌঁছে অ্যালভিওলাস বা ফুসফুসের বায়ুথলিতে। নিঃশ্বাস ফেলার সময় বাতাস আবার এই পথেই ফেরে। আমাদের এই শ্বাসপথের সবচেয়ে কোমল অংশ হলো ফ্যাংরিস বা গলবিল, যার পুরোটাই তন্তু ও মাংসপেশি দিয়ে তৈরি।
স্বাভাবিক অবস্থায় ফ্যাংরিসের আকার বেশ গোলাকার এবং বেশ জায়গাজুড়ে থাকে। কিন্তু ঘুমানোর এর আয়তন ছোট হয়ে যায়। চিত হয়ে শুয়ে ঘুমালে জিভ ঝুলে পড়ে ফ্যাংরিসের দিকে। তালু, ফ্যাংরিস ও জিভের মাংসপেশি শিথিল হয়ে পড়ে। ফলে বাতাস চলাচলে বাধা পায় এবং ধাক্কা খায়। এই বাধা বা ধাক্কার ফলে নরম তালু বা সফট প্যালেটে কম্পন হয় এবং নাক ডাকে। মোটা মানুষ এবং বয়স্ক মানুষদের পেশি বেশি শিথিল থাকে বলে তাদের নাক ডাকে বেশি।
নাক নানা কারণে ডাকে। নাকের বিভিন্ন অসুখে, নাকের পার্টিশনের হাড় বাঁকা থাকলে, নাকে পলিপ বা কোনো টিউমার থাকলে, অ্যালার্জি বা নাক বন্ধ থাকলেও নাক ডাকে। গলার বিভিন্ন অসুখেও নাক ডাকে। যেমন – টনসিল, বড় জিভ, লম্বা আলজিভ, ছোট চোয়ালের হাড়, তালুতে প্যারালাইসিস, সিস্ট, পলিপ ইত্যাদি। এছাড়াও অতিরিক্ত মেদ, মদ্যপান, ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, মাদকাসক্তি, থাইরয়েডের অসুখ, স্নায়ুঘটিত রোগ, হার্ট বা ফুসফুসের রোগ ইত্যাদি কারণেও নাক ডাকে। যারা নাক ডাকেন তারা নিজেদের এই সমস্যাটা টের পান না। তাই এগিয়ে আসতে হবে আশেপাশের মানুষজনকেই। নাক ডাকে যে মানুষটি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। কারণ কী কারণে নাক ডাকে এবং তার চিকিত্সা খুবই জরুরি। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিত্সা নিন।
নাক ডাকা রোগ থেকে মুক্তি পেতে সবার আগে ওজন কমান। ছেড়ে দিন ধূমপান, মদ্যপানসহ সব ধরনের মাদক। চেষ্টা করুন বালিশ ছাড়া ঘুমাতে। আর তাতেও কাজ না হলে ডাক্তাররা তো আছেনই!