হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক ইদানিং আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। এমন ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। সম্প্রতি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আকস্মিকভাবে মারা গেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীদেবী। হৃদরোগের সমস্যা অনেক সময় আগে থেকে বুঝে ওঠা যায় না। বংশগত কারণ ছাড়া বাকি সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণ রেখে বা পরিবর্তন করে হার্ট সুস্থ রাখা সম্ভব।
যাদের হার্টে এখনো কোনো সমস্যা বা অন্য কোনো অসুখ নেই, যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনির সমস্যাও নেই, তাদের জন্য হার্ট বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
৩০ বছর বয়স হলেই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তাররা। আমেরিকার হার্ট অ্যাসোসিয়েশন থেকে বলা হয়েছে এ উপায়গুলোর কথা।
চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া কমানো
কিছু পরিমাণ চর্বি আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজন। কিন্তু চর্বি বেশি খেলে সেই অতিরিক্ত চর্বি হার্টের ধমনির গায়ে জমা হয়ে তৈরি করতে পারে গুরুতর সমস্যা। স্যাচুরেটেড ফ্যাট-সংবলিত খাবার,
যেমন- মাংসের চর্বি, বার্গার, মাখন, কুকি, কেক ইত্যাদি বেশি খাওয়া ক্ষতিকর। অন্যদিকে পলি আনস্যাটুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড-সংবলিত খাবার রক্তের কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়।
বাদাম, মাছের তেল, সামুদ্রিক মাছ, সূর্যমুখী তেল ইত্যাদি এ জন্য ভালো। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, সপ্তাহে অন্তত ১০০ গ্রাম বাদাম খাওয়া উচিত।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন
ফাস্টফুডের বদলে দৈনিক খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে শাকসবজি, আঁশযুক্ত খাবার ও অন্তত একটি ফল।
ধূমপান ত্যাগ
হার্ট অ্যাটাকের ৫০ শতাংশ ব্যক্তিই ধূমপায়ী। ধূমপান অ্যাথেরোসক্লোরোসিসকে সরাসরি প্রভাবিত করে ও ধমনিগুলো শক্ত করে দেয়। ধূমপান পরিহার করার সঙ্গে সঙ্গে পান, জর্দা, তামাক ইত্যাদিও কমিয়ে দিতে হবে।
ব্যায়াম করুন নিয়মিত
আজকাল প্রায় সব কাজ টেবিল-চেয়ারে বসে বসে করতে হয়। ফলে দেহে চর্বি জমতে থাকে। যা করোনারি ধমনিতে অ্যাথেরোসক্লোরোসিস করে। অতএব, দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করতে হবে।
লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করতে হবে। অল্প দূরত্বে হেঁটে যেতে হবে। শিশুদের কম্পিউটার গেমসের পরিবর্তে খেলাধুলায় উৎসাহিত করতে হবে।
টেনশন কমান
জীবন পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখতে হবে, দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে হবে। অবসর সময় বইপড়া, বাগান করা, গান শোনা ও সমাজের কল্যাণকর কোনো কাজে ভূমিকা রাখা ইত্যাদি করা যেতে পারে।
বিশ্রাম নিতে হবে
কাজের ফাঁকে ৫-১০ মিনিট বিশ্রাম নিতে হবে। দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। সুন্দর দাম্পত্য জীবন বজায় রাখতে হবে।
যাদের শারীরিক অন্য সমস্যা আছে
উচ্চ রক্তচাপ থাকলে হার্টকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। ফলে হার্ট ক্রমে বড় হতে থাকে। এক সময় বড় হওয়া সত্ত্বেও শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত পাম্প করতে পারে না। এতে হার্ট ফেইলিউরে চলে যায়।
তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়েছে, তাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে। ডায়াবেটিস বর্তমানে হার্ট সমস্যার গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে চিহ্নিত। যাদের ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে, তাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনে ওষুধ বা প্রয়োজনে ইনসুলিন নেওয়ার মাধ্যমে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপের ডায়াবেটিক ও হার্ট সমস্যার রোগীরা যা এড়িয়ে চলবেন তা হলো খাসির মাংস ও চর্বিযুক্ত গরুর মাংস, মগজ, কলিজা ও ডিমের কুসুম, চিংড়ি মাছের মাথা, নারিকেল, মাখন, ঘি, দুধের সর, কেক, পেস্টি, সেমাই, পায়েস
তবে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, সপ্তাহে একদিন ডিমের কুসুম খাওয়া ক্ষতিকর নয়। পরিণত বয়সে বিশেষ করে যাদের হার্ট আর ডায়াবেটিস রোগের পারিবারিক ইতিহাস আছে, তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখা উচিত।