মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বঙ্গবন্ধুকন্যার জন্যই মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে: আব্দুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেছেন, ৭৫’ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার মধ্যদিয়ে বাঙালিদের দীর্ঘদিনের লড়াই সংগ্রামের সুফল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করা হয়েছিল। ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধীরা বঙ্গবন্ধুকে গুলি করেনি- তারা গুলি করেছিল বাংলাদেশের পতাকা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের বুকে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান তৈরি করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল।

বুধবার (১৯ মে) ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দলটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির উদ্যোগে ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৪ দশকের মানবতার আলোকবর্তিকা দেশরত্ন শেখ হাসিনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি বাংলাদেশে ফিরে না আসতেন- তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ণ প্রাপ্তি তো দূরে থাক, এই দেশটাই সেদিন থাকতো না। এটাই ছিলো সেদিনের বাস্তব চিত্র। সেদিন বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন বলেই বাংলাদেশ স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন। কিন্তু ৭৫’এ ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার মধ্যদিয়ে বাঙালার দীর্ঘদিনের লড়াই সংগ্রামের সফল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেও হত্যা করা হয়েছিল। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিল। সেদিন বাংলাদেশকে নতুন করে পাকিস্তান তৈরি করার চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে ফিরে এসেছিল বলে গণতন্ত্র পুনুরুদ্ধার হয়েছে। মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। নানামূখি উন্নয়নের জোয়ারে আজ পুরো বাঙালা জাতি ভাসছে।

ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুর রহমান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন যদি দেশে না আসতেন, তা হলে বাংলাদেশ থাকতো না। বাংলাদেশটাই পাকিস্তানে পরিণত হয়ে যেতো। বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৭ মে বাংলার মাটিতে পা রাখার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ পুনর্জন্ম হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বাবা মা ভাইসহ পরিবারের সকল সদস্যদের হারিয়ে দুঃখের সাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের কাছে এসেছিলেন উল্লেখ্য করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে সারা দেশের পথে-প্রান্তরে, মাঠে-ঘাটে, শহরে-নগরে একটি আওয়াজ উঠেছিল- চলো চলো শেখ হাসিনাকে দেখার মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধুকে আমরা আবার দেখবো। সেদিন বাংলার মানুষ, বাংলার আকাশ, বাংলার পাখি ও বাংলার বাতাস কেঁদেছিল।

তিনি আরও বলেন, দেশের মাটিতে পা দিয়ে সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেছিলেন- আমার রাজনীতি করার কোনো ইচ্ছে ছিলনা, আমার রাজনীতিতে আশার কথা নয়। কিন্ত আজ পিতাকে হারিয়েছি, মা কে হারিয়েছি, পরিবারের সকল সদস্যকে হারিয়েছি। বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন দেখেছিলেন- সেই স্বপ্ন পূরণ করাই আজ আমার মূল লক্ষ্য। বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে যদি আমার জীবন বাবার মতো বিলিয়ে দিতে হয় দিবো। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবো।

আবদুর রহমান বলেন, স্বদেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুকন্যা যে প্রতিশ্রুতি করেছিলেন, তার প্রতিটি কথাই আজ বাস্তবায়ন হয়েছে, প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি আজ শুধু শেখ হাসিনা নয়, সফল রাষ্ট্রনায়ক নয়, তিনি বাঙালীর জাতির নেতা নয়, তিনি আজ বিশ্বনেত্রী। বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে মানবতার মা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন।

করোনাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতা বলেন, করোনায় পুরো বিশ্ব আজ থমকে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর পরিশ্রম ও দুর্র্দর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ঘুরে দাড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু রাষ্ট্রপরিচালনায় সফল নয়, দলের নেতৃত্বে তিনি সফল। তার নির্দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, ছাত্রলীগ সহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। মানুষের বাড়ি বাড়ি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে। এটাই বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের গুণ ।

আব্দুর রহমান বলেন, ‘এই দুযোর্গ-দুর্বিপাক ও সংকটকে পুঁজি করে এক ধরনের ধর্মীয় উগ্রবাদী ও মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক মতলবাজ শক্তি এই বাংলাদেশকে ভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের এই সংসারে শেখ হাসিনার আহ্বানে নেতাকর্মীরা জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে পারে। সেই দল এবং সেই দলের নেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে লাগবে না। কেউ ষড়যন্ত্র করে পার পাবে না।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, ‘যারা এই ষড়যন্ত্র লিপ্ত রয়েছে, যারা স্বপ্ন দেখেন পাকিস্তানের ইসলামাবাদ বানানোর, তাদের উদ্দেশে হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে বলি, আমরা একাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই দেশ মাতৃকাকে স্বাধীন করেছি। ১৫ আগস্টের পর জিয়াউর রহমানের সেই বিষ ছোবল থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছি এবং এই শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। যেকোনো সংকটে, যেকোনো দুর্যোগে এই আওয়ামী পরিবার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বজ্র কঠিন শপথ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।’

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন। দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী। আলোচক হিসেবে আরও বক্তব্য দেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, পারভীন জামান কল্পনা, সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীমসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসিরউদ্দিন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. খলিলুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ কামাল।

অনুষ্ঠানের শুরুতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে বিশেষ দোয়া পরিচালনা করা হয়। অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজ) সাবেক সভাপতি সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল।

এই বিভাগের আরো খবর