আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যে রোগীদের শরীরে কোনো উপসর্গ নেই অর্থাৎ যাঁরা ‘অ্যাসিম্পটম্যাটিক’, তাঁদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর ঘটনা বিরল বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। অথচ এর আগে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, করোনাজনিত কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ নিয়ে সবচেয়ে উদ্বেগের কারণ অ্যাসিম্পটম্যাটিক বা উপসর্গহীন রোগীরা। কেননা, উপসর্গহীন আক্রান্তদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ালে তা বোঝা যাবে না। তাই সংক্রমণ মোকাবিলা করা তখন কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা জানালেন অন্য কথা।
বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর পর থেকেই বহু বিশেষজ্ঞ জানিয়েছিলেন, অনেক কমবয়সী বা আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ-সবল ব্যক্তির মধ্যে হয়তো করোনার সংক্রমণ ঘটবে। কিন্তু তাঁদের শরীরে করোনার কোনো উপসর্গই দেখা যাবে না। বা দেখা গেলেও, তা হবে খুবই মৃদু। কিংবা এমনও হতে পারে যে, আক্রান্ত হওয়ার বেশ কিছুদিন পর মৃদু উপসর্গ দেখা দিয়েছে।
কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ শুরুর সময় থেকেই দেখা গেছে, একজন আক্রান্ত থেকে অন্য মানুষের শরীরে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এমনকি কোনো করোনায় আক্রান্তের শরীরে উপসর্গ না থাকলেও তাঁর থেকে অন্যের শরীরে সংক্রমণ ছড়ানোরও প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গতকাল সোমবার জানায়, এভাবে সংক্রমণ ছড়াতেই পারে, কিন্তু এটাই সংক্রমণ ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম নয়। সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও দ্য ওয়াল এ খবর জানিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমার্জিং ডিজিজ বিভাগের প্রধান মারিয়া ভ্যান কারখোভ এদিন বলেন, ‘আমাদের কাছে যে তথ্য ও পরিসংখ্যান রয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে উপসর্গহীন রোগীদের মাধ্যমে অন্য কারো শরীরে সংক্রমণ ছড়ানোর হার খুব কম। বলতে গেলে বিরল।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জেনেভার সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনের সময় মারিয়া এ বিষয়ে জোর দিতে গিয়ে আবার বলেন, ‘এটা খুবই বিরল।’
তবে প্রশ্নের মুখে মারিয়া স্বীকার করেন যে, কোনো কোভিড-১৯ রোগীর শরীরে উপসর্গ না থাকলে তাঁর মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর ঘটনা যে নেই, তা নয়। কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি এও বলেন, ‘এ ব্যাপারে আরো গবেষণা, আরো পরিসংখ্যান দরকার। কারণ, আমাদের কাছে বেশ কয়েকটি দেশের তথ্য এসেছে, যারা খুব ভালো করে কনট্যাক্ট ট্রেসিং করেছে। তারা দেখেছে, উপসর্গহীন রোগীদের থেকে অন্যজনের শরীরে খুব বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে না। এটা খুবই বিরল।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমার্জিং ডিজিজ বিভাগের প্রধান আরো বলেন, ‘একটা কথা আমাদের স্পষ্ট বোঝা দরকার, তা হলো—যে রোগীদের উপসর্গ রয়েছে, তাঁদের যদি আমরা চিহ্নিত করতে পারি এবং তাঁরা যাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদের আইসোলেশনে বা কোয়ারেন্টিনে রাখতে পারি, তা হলে সংক্রমণ ছড়ানোর হার এক ধাক্কায় কমে যাবে।’
এদিন সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ দাবি মাইলফলক হতে পারে বলে অনেক পর্যবেক্ষকের মত। সে ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মোকাবিলার শর্ত এবং নিয়মকানুনও বদলে যাওয়ার কথা।