বিনোদন ডেস্ক : ষাটের দশকের জনপ্রিয় বলিউড অভিনেত্রী-নৃত্যশিল্পী বেলা বসু। খলনায়িকা থেকে নায়িকা, কৌতুকাভিনয়শিল্পী থেকে হয়ে উঠেছিলেন চরিত্রাভিনেত্রী। তবে নৃত্যশিল্পী হিসেবে বাজিমাত করেছিলেন তিনি। টিনসেল টাউন জয় করা এই অভিনেত্রী এখন হারিয়ে গিয়েছেন স্মৃতির পাতায়।
কলকাতার এক সম্ভান্ত পরিবারে ১৯৪১ সালের ১৮ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন বেলা বসু। কিন্তু আর্থিক টানাপড়েনের কারণে তার বাবা অমূল্যরতন বসু কলকাতা থেকে মুম্বাইয়ে পাড়ি জমান ১৯৫১ সালে। সেখানে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু ১৯৫৩ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় বেলা বসুর বাবা মারা যান। হঠাৎ তার জীবনে ছন্দপতন ঘটে।
এ পরিস্থিতিতে সংসারের হাল ধরেন বেলা বসুর মা লীলাবতীদেবী। তিনি ছিলেন গৃহবধূ। আর্থিক সংকট কাটাতে নার্সিংয়ের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে নার্স হিসেবে যোগ দেন তিনি। শুরু হয় তাদের নতুন যুদ্ধ। মুম্বাই এসে কত্থক, কথাকলিসহ বিভিন্ন ধরনের নাচের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন বেলা। তাদের এই আর্থিক সংকটের সময় নিজের নৃত্যশিক্ষা কাজে লাগিয়ে মায়ের পাশে দাঁড়ান বেলা বসু। তখন মাত্র স্কুলের পাঠ শেষ করেছেন তিনি।
বেলা বসুর নাচের শিক্ষক তার ছাত্রীদের হিন্দি সিনেমায় গ্রুপ ডান্সার হিসেবে কাজের সুযোগ করে দিতেন। সেখান থেকে যা পারিশ্রমিক পেতেন তা মায়ের হাতে তুলে দিতেন বেলা বসু। আর এভাবেই বলিউডে কাজের সুযোগ পান তিনি। মুম্বাইয়ের অন্ধেরীতে থাকতেন বেলা। মাঝে মাঝেই স্কুলফেরত বান্ধবীদের সঙ্গে পৌঁছে যেতেন স্টুডিওতে। সেই সূত্রেই শুটিংয়ের পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন বেলা।
স্কুল শিক্ষা শেষ হওয়ার পর বেলা ঠিক করেন গ্রুপ ডান্স পেশা হিসেবে নেবেন। কারণ ছোট ছোট চার ভাই-বোন ও মায়ের পাশে না দাঁড়িয়ে বিকল্প কোনো পথ ছিল না কিশোরী বেলার। তার বিশেষ গুণ ছিল—খুব দ্রুত যেকোনো নাচ তুলে নিতে পারতেন। কিন্তু নিজের শারীরিক গড়ন কাল হয়ে দাঁড়ায় বেলার। কারণ স্বাভাবিক ভারতীয় কিশোরিদের তুলনায় বেলা অধিক লম্বা ছিলেন। ফলে প্রায়ই নাচ থেকে তাকে বাদ পড়তে হয়েছে তাকে।
যদিও এই শারীরিক উচ্চতাই তাকে জীবনের বড় সুযোগ করে দেয়। অর্থাৎ শারীরিক উচ্চতা বেশি হওয়ার কারণে একক নৃত্য পরিবেশনের সুযোগ পেয়ে যান বেলা। আর এই সুযোগ দেন পরিচালক নরেশ সেহগল। ৪০ জন নৃত্যশিল্পীর মধ্য থেকে সবচেয়ে লম্বা বেলাকে বেছে নেন তিনি। তাও একটি সিনেমার জন্য।
পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে বেলা বসু হয়ে উঠেন বলিউডের একজন একক নৃত্যশিল্পী। তার প্রথম বড় ধরনের ব্রেক এসেছিল ‘ম্যায় নাশে মে হু’ সিনেমায়। ১৯৫৯ সালে মুক্তি পায় এটি। এতে নায়ক-নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন রাজ কাপুর-মালা সিনহা। মেধা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নৃত্যশিল্পী হিসেবে বলিউডে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করেন তিনি। পাশাপাশি হেলেন-আশা পারেখ-মুমতাজের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেন বেলা।
এরপর ‘সাওতেলা ভাই’ সিনেমায় প্রথম কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে সবার নজর কাড়েন বেলা। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন গুরু দত্ত। এটি মুক্তি পায় ১৯৬২ সালে। একই বছর ‘হাওয়া মহল’ সিনেমায় অভিনয় করেন বেলা। সময়ের সঙ্গে চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বেলার কথা ভাবতে শুরু করেন নির্মাতারা।
১৯৬৬ সালে ‘নাগিন আউর সাপেরা’ সিনেমায় প্রথম নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন বেলা বসু। এতে তার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন মনোহর দেশাই। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো—‘এক ফুল চার কাঁটে’, ‘ছোট নওয়াব’, ‘বন্দিনী’, ‘প্রফেসর’, ‘অপেরা হাউস’, ‘শিকার’, ‘প্রেমপত্র’, ‘চিত্রলেখা’ প্রভৃতি।
১৯৬৭ সালে প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেতা আশিস কুমার সেনগুপ্তর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন বেলা বসু। বিয়ের পর ধীরে ধীরে অভিনয় থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেন বেলা। দুই সন্তানের জননী হওয়ার পর পুরোপুরি অভিনয় ছেড়ে দেন এই অভিনেত্রী। বেলার মেয়ে মঞ্জুশ্রী এখন প্রতিষ্ঠিত একজন চিকিৎসক। অন্যদিকে ছেলে অভিজিৎ উচ্চপদে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ২০১৩ সালে বেলার স্বামী প্রয়াত হন। এখন নাতি-নাতনি নিয়েই কাটে তার সময়। প্রচারে আসতেও ভীষণ আপত্তি এই অভিনেত্রীর।