ডেস্ক নিউজ : করোনা সংকটের মধ্যে দেশে ফেরা ৭০ শতাংশ অভিবাসী জীবিকা, আর্থিক সংকট (উপার্জনের অভাব ও বর্ধিত ঋণ) এবং স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়সহ নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। বৃহৎসংখ্যক জীবিকাহীন অভিবাসী কর্মী ফেরত আসার ফলে রেমিট্যান্স-নির্ভর জনগোষ্ঠীর ওপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। দেশের ১২ জেলায় বিদেশফেরত অভিবাসীদের ওপর আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা—আইওএমের পরিচালিত এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। মোট ১ হাজার ৪৮৬ জন বিদেশফেরত অভিবাসী জরিপে অংশ নেন। সম্প্রতি একটি ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে আইওএম।
গবেষণায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ফেরাদের প্রায় ৭০ শতাংশ জীবিকাহীন। কোভিড-১৯-এর প্রভাবে সুনির্দিষ্টভাবে অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে এই সংকট তৈরি হয়েছে। উপার্জনব্যবস্থা, সামাজিক সেবা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সহায়তার নেটওয়ার্কের অভাবে হাজার হাজার অভিবাসী কর্মী দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মোট ২৯ শতাংশ বলেছেন, যে দেশে তারা ছিলেন সেই দেশ ত্যাগ করতে বলায় তারা ফেরত এসেছেন। ২৩ শতাংশ জানান, তারা কোভিড-১৯ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন এবং পরিবারের কাছে ফেরত আসতে চেয়েছেন। ২৬ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের পরিবার আসতে বলায় তারা ফিরে এসেছেন। ৯ শতাংশ জানান, তাদেরকে বলা হয়েছে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং আটকে পড়ার ভয়ে তারা ফেরত এসেছেন।
সাক্ষাত্কার প্রদানের সময় মোট ৫৫ শতাংশ জানান, তাদের ওপর ঋণের বোঝা রয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ পরিবার ও বন্ধুর কাছে ঋণগ্রস্ত, ৪৪ শতাংশ ক্ষুদ্র ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (এমএফআই), স্বনির্ভর দল এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণগ্রস্ত। পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণকারীদের ৮৬ শতাংশ বিনা সুদে ঋণ নিয়েছেন। অন্যদিকে এমএফআই, এনজিও এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে নেওয়া ঋণের জন্য সুদ দিতে হচ্ছে।
আইওএম বাংলাদেশের মিশনপ্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির সময় সবচেয়ে বিপদাপন্ন গোষ্ঠীদের মধ্যে রয়েছেন অভিবাসী কর্মীরা। বৈশ্বিক চলাচলের ওপর আরোপিত নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং কোভিড-১৯ মহামারি সৃষ্ট মন্দার ফলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মী এবং রেমিট্যান্স-নির্ভর জনগোষ্ঠীর ওপর।
সাক্ষাত্কারে অংশগ্রহণকারীদের ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা সম্পর্কে জিগ্যেস করা হলে প্রায় ৭৫ শতাংশ জানান, তারা আবার অভিবাসনে আগ্রহী। তাদের মধ্যে ৯৭ শতাংশই কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের আগে যে দেশে কাজ করতেন সেই দেশেই পুনরায় অভিবাসনে ইচ্ছুক। ‘র্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট অব নিডস অ্যান্ড ভালনারেবিলিটিস অব ইন্টারনাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিটার্ন মাইগ্র্যান্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই গবেষণাটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ‘রিজিওনাল এভিডেন্স ফর মাইগ্রেশন অ্যানালাইসিস অ্যান্ড পলিসি’ (রিমেপ) প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত হয়েছে।