বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) দশম হিজরী সনের পবিত্র হজের সময় প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার সাহাবির সামনে জিলহজ মাসের ৯ তারিখ বিকালে আরাফাতের ময়দানে যে বক্তব্য পেশ করেন তাকেই বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ বলে। এটি ছিল মানব জাতির উদ্দেশে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের সর্বশেষ ভাষণ।
এই ভাষণে মহানবী (সা.) বলেছিলেন-
১. হে মানব জাতি! তোমরা আমার কথাগুলো মন দিয়ে শোন, আমি জানি না, এবারের পর তোমাদের সঙ্গে এ স্থানে আর মিলিত হতে পারব কিনা। সিরাতে ইবনে হিশাম।
২. হে মানব জাতি! মনে রেখ তোমাদের আল্লাহ এক, তার কোনো শরিক নেই, তোমাদের আদি পিতা এক, কোনো অনারবের উপর কোনো আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তেমনি কোনো সাদার উপর কোনো কালোর শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কেবলমাত্র আল্লাহভীতিই শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি। তাবারি।
৩. তোমাদের জীবন ও সম্পদ, তোমাদের পরস্পরের কাছে তেমনি পবিত্র, যেমনি আজকের এই স্থান ও দিনটি পবিত্র, এই মাস, এই শহর পবিত্র। মুসলিম শরীফ।
৪. জাহেলিয়াতের সবকিছু আমার পদতলে পিষ্ট, জাহেলি যুগের সব, রক্তের দাবি রহিত করা হলো।
৫. আজ থেকে জাহেলি যুগের সর্বপ্রকার সুদ রহিত করা হলো।
৬. তোমাদের স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করবে। তোমরা তাদের আল্লাহর কালামের মাধ্যমে হালাল করে নিয়েছ, তোমরা তাদের অন্ন-বস্ত্রের ব্যবস্থা করবে।
৭. হে মানব জাতি! মনে রেখ আমার পরে আর কোনো নবী আসবে না। আর তোমাদের পরেও কোনো উম্মত নেই। কাজেই তোমরা খুশি মনে নামাজ আদায় করবে, রমজানের রোজা রাখবে, সম্পদের জাকাত আদায় করবে এবং বাইতুল্লাহর হজ পালন করবে, শাসকের আনুগত্য করবে, তবেই তোমরা আল্লাহর জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। তাবারি।
৮. হে মানব জাতি! পিতার অপরাধে পুত্র দায়ী হবে না এবং পুত্রের অপরাধে কোনো পিতা দায়ী হবে না। তিরমিযি।
৯. হে মানব জাতি! শিগগিরই তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর দরবারে জিজ্ঞাসিত হবে। তাবারি।
১০. মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।
১১. হে মানব জাতি! আমি তোমাদের কাছে দু’টি বস্তু রেখে গেলাম, যদি তোমরা তা দৃঢ়ভাবে ধরে রাখ, তবে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তার মধ্যে একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমার সুন্নাত। যারা এখানে নেই তাদের কাছে আমার এই বাণীগুলো পৌঁছে দিবে।
১২. হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের দাস-দাসী সম্পর্কে সতর্ক থাকবে। তোমরা যা খাবে তাদের তা খেতে দিবে, তোমরা যা পরবে তাদের তা পরাবে। তোমরা তাদের ক্ষমা করে দিবে, তোমরা কখনো তাদের শাস্তি দিবে না।
১৩. হে মানব জাতি! তোমরা দিনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করবে না। কারণ অতীতে বহু জাতি দিনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে ধ্বংস হয়ে গেছে। নাছায়ী ইবনে মাযা শরীফ।