আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আজ বৃহস্পতিবার পবিত্র হজ। এমন হজ আগে আর কখনো দেখেনি বিশ্ব। করোনা মহামারির বাস্তবতায় পুরোপুরি অচেনা রূপে শুরু হয়েছে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। যেখানে প্রথমবারের মতো অন্য দেশ থেকে হজ পালনে সৌদি আরব যেতে পারছেন না ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। এবারের হজে শুধু তাঁরাই অংশ নিতে পারছেন, যাঁরা সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। সৌদি আরবের নাগরিক ও বর্তমানে সেখানে অবস্থান করা অন্য দেশের নাগরিকসহ মোট এক হাজার ভাগ্যবান মানুষ এবার হজে অংশ নিয়েছেন। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়াননিমাতা লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাকা’ ধ্বনিতে আজ সারাদিন মুখর থাকবে আরাফাতের ময়দান।
স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী এবার বিশেষ শর্তে মুসল্লিদের হজ পালনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। হজ শুরুর আগে অংশগ্রহণকারীরা প্রটোকল অনুযায়ী সাত দিনের আইসোলেশনে থাকেন। সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গত ১৯ জুলাই থেকে আইসোলেশনের মাধ্যমে হজের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
হজ চলাকালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যাতে না ছড়ায়, সে লক্ষ্যে বিভিন্ন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি সরকার। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি বিনা অনুমতিতে মক্কা ও এর আশপাশের এলাকায় প্রবেশে কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যাঁরা ২০ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত বিনা অনুমতিতে হজের রোকন অঞ্চলে প্রবেশ করবেন, তাঁদের জন্য ১০ হাজার রিয়াল জরিমানার বিধান করা হয়েছে। একাধিকবার প্রবেশ করলে এ জরিমানা দ্বিগুণ হবেও বলে জানিয়েছে দেশটির দায়িত্বশীল প্রশাসন।
নিবন্ধনকৃত ১০ হাজার হজযাত্রীর মধ্যে মাত্র এক হাজার হজযাত্রীর পদচারণায় মিনার মাঠে শুরু হয় পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁরা পবিত্র মক্কা নগরী থেকে পাড়ি জমান মিনার দিকে। মিনার খিমায় (তাঁবু) তাঁদের সবাইকে একত্রে রাত কাটাতে হয়। তার আগে সবাইকে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সাত দিন আইসোলেশন পালন করতে হয়। প্রতিটি তাঁবুতে এবার দুই থেকে চারজন হজযাত্রীর একত্রে থাকার সুবিধা রয়েছে যাতে কোভিড-১৯ বিধানের আওতায় সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকেও এবারের সীমিত আকারের ব্যতিক্রমী হজের সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। সেটি অনুসরণ করেই মক্কা মদিনা, মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতের ময়দানে নেওয়া হয়েছে বিশেষ সুব্যবস্থা।
গতকাল বুধবার সারা দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন হজ পালনকারীরা। আজ বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজ শেষে তাঁরা মিনা থেকে যাবেন আরাফাতের ময়দানে। তাঁদের সঙ্গে থাকে শুধু একটি ব্যাগ-যাতে রাখা হয় কিছু জরুরি কিছু জিনিসপত্র। যেমন, থালা-বাসন, পানির মগ, ওষুধ ও ওজু-গোসলের জন্য গামছা জাতীয় কাপড়। মূলত আরাফাতের ময়দানে ৯ জিলহজ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করাই হজের মূল কাজ।
সহিহ হাদিসে রয়েছে, যিনি ৯ জিলহজ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অকুফে আরাফায় অবস্হান করবেন, তিনিই হাজি হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। আর হজে মকবুল বা কবুল হজের ফজিলত হচ্ছে নিশ্চিত জান্নাত লাভ।
এদিকে এবার জমজমের পানি বোতলে করে সরবরাহ করা হবে হাজিদের। তবে করোনার কারণে ছোঁয়া যাবে না কাবাঘর, কালো পাথরে চুমু খাওয়াও এবার নিষিদ্ধ। নামাজ পড়ার জন্য আনতে হচ্ছে নিজস্ব জায়নামাজ।
এবারের হজে হাজিদের সব খরচ দিচ্ছে সৌদি সরকার। হজের দ্বিতীয় দিন আরাফাতের ময়দানের খুতবা বাংলাসহ ১০টি ভাষায় অনূদিত হবে।