ডেস্ক নিউজ : না ফেরার দেশে চলে গেলেন ভাস্কর্যশিল্পী মৃণাল হক। ঢাকা শহরে এখন আমরা যেসব ভাস্কর্য দেখি, তার অধিকাংশেরই শিল্পী তিনি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- রূপসী বাংলা হোটেলের সামনে ঘোড়ার ভাস্কর্য। যেটির নাম ‘রাজসিক বিহার’। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ‘দুর্জয়’ ভাস্কর্য। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে ‘রত্নদ্বীপ’। নৌবাহিনীর সদরদপ্তরের সামনে ‘অতলান্তিক’। মতিঝিলের ‘বক’, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গোল্ডেন জুবিলী টাওয়ার’ ইত্যাদি।
এছাড়াও মৃণাল হক নির্মাণ করেছিলেন বেশকিছু ভাস্কর্য। রাজধানীতে নাবিস্কো বিস্কুট কারখানার পাশে তিনি নির্মাণ করেন সাইকেলের পুরানো চেইন দিয়ে ভিন্ন ধরণের ভাস্কর্য ‘জাঙ্কইয়ার্ড ফ্যামিলি’। সাতরাস্তার মোড়ে ‘বর্ষারানী’ নামে মৃণাল হক একটি নান্দনিক এবং বেশ বড়সড় ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিলেন। যা ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রয়োজনে সেটি সরিয়ে ফেলতে হয়।
ধানমন্ডি ২৭ নম্বর মোড়ে নির্মাণ করেন ভাস্কর্য ‘ইস্পাতের কান্না’। ভাষা আন্দোলন নিয়ে পরিবাগে তিনি বানিয়েছিলেন ভাস্কর্য ‘জননী ও গর্বিত বর্ণমালা’।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সামনে গ্রিক দেবী থেমিসের অনুকরণে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন এই শিল্পী। সেই সঙ্গে রাজধানীর গুলশান ১ এর ২নম্বর রোডে প্রায় বারো কাঠার উপর নির্মিত একটি বাড়িতে তিনি তৈরি করেন ‘সেলিব্রেটি গ্যালারি’। দেশি-বিদেশি সেলিব্রেটিদের ভাস্কর্য নিয়ে ‘সেলিব্রেটি গ্যালারি’ বানিয়েও বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন ভাস্কর মৃণাল হক।
উল্লেখ্য, মৃণাল হক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজশাহীতে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন। ১৯৮৪ সালে তিনি মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
১৯৯৫ সালে মৃণাল হক আমেরিকাতে পাড়ি জমান এবং সেখানে তার প্রথম কাজ শুরু করেন। নিউইয়ার্ক সিটিতে অবস্থিত বাংলাদেশের দুতাবাসে তার প্রথম প্রদর্শনি প্রদর্শিত হয়। তিনি নিউইয়ার্কে এত বেশি কাজ করেন যে, নিউইয়ার্কের সরকারি টিভি চ্যানেলে তার একটি সাক্ষাৎকার ২৬ বার এবং সিএনএন চ্যানেলে ১৮ বার প্রচারিত হয়।
২০০২ সালে মৃণাল হক দেশে ফিরে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। একই বছর তিনি নিজ উদ্যোগে নির্মাণ করেন মতিঝিলের বক ভাষ্কর্যটি । ২০০৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নির্মাণ করেন ‘গোল্ডেন জুবিলী টাওয়ার’।