শুক্রবার, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নওগাঁয় বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ প্রকল্পের কাজ না করেই বিল উত্তোলনের অভিযোগ

রহিদুল ইসলাম রাইপ, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁয় স্বাভাবিক হতে চলেছে ৩ বারের বন্যা পরিস্থিতি। সম্প্রতি বন্যায় জেলার মান্দা-আত্রাই সড়কের ৪টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বন্যায় প্লাবিত হয়েছিলো শতাধিক গ্রাম।

এছাড়াও বন্যার পানিতে প্লাবিত রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম। নষ্ট হয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল আর ভেসে গেছে শতাধিক পুকুরের কোটি টাকার মাছ।
এদিকে নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে একটি বেড়িবাঁধের পুনরাকৃতির কাজ শুরু না করতেই ১ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে।

জেলার মান্দা উপজেলার জোঁকাহাট চকরামপুরে ১৯/২০ অর্থ বছরের নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনস্ত পওর বিভাগ প্রকল্প পোল্ডার-সি এর আত্রাই নদীর ডান তীরে কি.মি. ৫০০০ হতে কি.মি. ৬৮০০ পর্যন্ত মোট ১৮০০ মিটার বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ কাজের বরাদ্দ আসে। যার টেন্ডার আইডি নং ৪৫৫২৫৮ এবং চুক্তির প্রায় মূল্য ১০৪.০৭ কোটি টাকা। এই প্রকল্পটির পরিচালন ব্যয় খাতে ১৯/২০ অর্থ বছরে ৩৩.৪৭লক্ষ টাকা আংশিক বরাদ্দ এলেও কোনরকম কাজ না করেই কাগজ কলমে আংশিক বাস্তবায়ন দেখিয়ে ১ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তারা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় গত ১৭ সালে জেলার মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপর ইউনিয়নের জোঁকাহাট চকরামপুর নামক স্থানে আত্রাই নদীর ডান তীর সংলগ্ন বেড়িবাঁধের কিছু অংশ ভেঙ্গে যায়। ভেঙ্গে যাওয়া এই অংশটুকু দীর্ঘদিন সংস্কার কিংবা মেরামত না করার কারণে সম্প্রতি আত্রাই নদীতে অস্বাভাবিক ভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ভেঙ্গে যায় পাউবোর মান্দা-আত্রাই বেড়িবাঁধের পুনরাকৃতিকরণ অংশের ঝুকিপূর্ণ অংশ। এতে করে বন্যায় প্লাবিত হয় শতাধিক গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয় শত শত বিঘা জমির ফসল। স্থানীয়রা জানান গত ৩বছরে এখানে এক কোদাল মাটি কিংবা এক টুকরা সিমেন্ট বালি বা বালির বস্তাও ফেলা হয়নি।

চকরামপুর গ্রামের জাফর প্রামাণিক, সাইফুল ইসলাম, মোহসিনসহ স্থানীয় অনেকেই বলেন ১৭ সালে ভেঙ্গে যাওয়া নদী সংলগ্ন বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ কিছু অংশ ভেঙ্গে যায়। ভেঙ্গে যাওয়া অংশটি মেরামত না করায় সম্প্রতি আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে পানির ঢলে ভেঙ্গে যায় মান্দা-আত্রাই বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ। আর বন্যায় প্লাবিত হয় শত শত গ্রাম। আমাদের দেখা মতে বাঁধের পুনরাকৃতিকরণ বিন্দুমাত্র কোনো কাজ করা হয়নি। আমরা কোনো কাজ করতেই দেখিনি।

বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আলম বলেন ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ মেরামত করার মতো কোন বরাদ্দ আমাদের কাছে আসে না বলেই চেয়ে থাকতে হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দিকে কিংবা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দিকে কিন্তু কোন লাভ হয় না। বাঁধের ভাঙ্গা অংশ বছরের পর বছর ভাঙ্গাই থাকে আর নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের নতুন নতুন অংশে ভাঙ্গছে আর প্রতিবছরই বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে শত শত গ্রাম। মান্দা-আত্রাই বেড়িবাঁধের চকরামপুর নামক ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বাঁধের পুনরাকৃতিকরণের বিন্দুমাত্র কোন কাজ করা হয়নি বলে আমি জানি। এছাড়া ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধে মেরামতের কোনো কাজ না করায় এবারের বন্যায় প্রধান বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে আমার ইউনিয়নের সবগুলোগ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছিলো।

ঠিকাদার আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন যে সময় আমাকে কাজটি দেওয়া হয় তখন নদীতে প্রতিনিয়তই পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কাজ পুরোপুরি শুরু করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে ঝুঁকিপূর্ন কিছু কিছু স্থানে কাজ করেছিলাম। যার কিছু বিল হিসেবে অফিস আমাকে ১লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা দিয়েছে। কিন্তু আমি কাজ করেছি কয়েক লাখ টাকার। কাজ না করে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ সম্পন্ন মিথ্যে।

প্রকল্পের দায়িত্বরত উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন অনিয়মের বিষয় অস্বীকার করে বলেন ঠিকাদারকে যে কাজের বিল দেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফউজ্জামান খাঁন জানান আমার সময় এসব কাজ করা হয়নি। এছাড়া ঠিকাদারের ১০লাখ টাকা জামানত হিসেবে রয়েছে। তাই কাজ না করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। প্রকল্পের কাজ শুরুর সময় নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। কাজটি ধরে রাখার নিমিত্তে আংশিক কাজ সম্পন্ন করে ঠিকাদারকে কিছু অর্থ প্রদান করা হয়েছে। আমি আশা রাখি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের সকল কাজ সঠিক ভাবে সম্পন্ন করা হবে।

এই বিভাগের আরো খবর