রবিবার, ১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আশ্চর্য ভাবে এগারটি সাপ একসাথে হাতে তুলে নিলেন সাপুড়ে (ভিডিও)

সাপ খেলা দেখিয়ে জীবিকা

অ- অ অ+
দাঁড়াশ, গোখরা, কালনাগিনী, কাঁটা ধুন্ধল, দুধরাজসহ বিষধর সাপের খেলা দেখিয়ে প্রায় ২০ বছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন পাবনার রাজাপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন। সম্প্রতি পুলিশের পক্ষ থেকে সাপ খেলা দেখাতে নিষেধ করায় তিনি বিপাকে পড়েছেন।

পাবনা শহরতলির রাজাপুর গ্রামের মৃত কবিরাজ আলীর চার ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর দ্বিতীয়। বোনদের সব বিয়ে হয়ে গেছে। ভাইয়েরা সবাই অন্য পেশায়। তিনি জীবিকার প্রয়োজনে বেছে নিয়েছেন সাপ খেলা দেখানো। গতকাল শুক্রবার জাহাঙ্গীর পাবনা পুলিশ লাইনস মাঠে পুলিশের উদ্যোগে বৈশাখী আয়োজনে এসেছিলেন খেলা দেখাতে। ১২টি সাপ নিয়ে দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছেন। খেলা দেখানোর ফাঁকে বলেন, ‘যে পুলিশের নির্দেশে খেলা দেখানো বন্ধ হয়ে গেছে, তারাই আমন্ত্রণ জানিয়েছে খেলা দেখাতে। ’

জাহাঙ্গীর জানান, তিনি পাবনা ক্যালিকো কটন মিলের মেশিনম্যান ছিলেন। মালিকানা জটিলতায় মিলটি বন্ধ হয়ে গেলে অর্থকষ্টে পড়েন। ১৯৯০ সালে পাবনা টাউন হলের বাইরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন তিনি। দীর্ঘ চিকিৎসায় সুস্থতা ফিরলেও একটানা কঠোর পরিশ্রম করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেন। বেকারত্ব ঘোচাতে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের কাজের চেষ্টা করেছেন। সফল না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন। ভবঘুরের মতো ঘুরতে থাকেন এখানে-সেখানে তিনি। বয়স যখন ২০-এর কোঠায় একদিন ফুটপাতে সাপের খেলা দেখতে দেখতে তাঁর ভালো লেগে যায়। সিদ্ধান্ত নেন এ খেলা শেখার। সেদিন ফুটপাতে খেলা দেখাচ্ছিলেন সুজানগর উপজেলার চিনাখড়া গ্রামের নুরুল ইসলাম বিশ্বাস। খেলা শেষে নুরুলকে ইচ্ছার কথা জানান। এরপর শুরু হয় তালিম। গুরুর সঙ্গে তিনি পাবনা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় যেতেন বিষধর সাপ ধরতে। ধীরে ধীরে সাপ ধরা ও বিষ নামানোর কৌশল রপ্ত করেন। এরপর শেখেন খেলা দেখানো। গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে পাবনা শহরের নতুন সেতুর পাশের ফুটপাতে সাপের খেলা দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।

চার সন্তানের জনক জাহাঙ্গীর জানান, তিনজন সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নতুন সেতু এলাকায় সাপের খেলা দেখান। এতে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। এ টাকায় পরিবার প্রতিপালনের পাশাপাশি সংগ্রহের সাপগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করেন কোনো রকমে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কোনো রকমে সংসার চালাই। তিন-চার দিন আগে পুলিশের পক্ষ থেকে শহরের প্রধান সড়কের পাশে সাপের খেলা বন্ধ করার জন্য আমাকে নির্দেশ দিয়েছে। এর পর থেকে বন্ধ রয়েছে আমার উপার্জন। আমি এখন কোথায় গিয়ে খেলা দেখাব?’

পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘শহরের প্রধান সড়কে ঝুঁকির কারণে তাঁকে সাপ খেলা দেখাতে নিষেধ করা হয়েছে। যেহেতু তিনি কেবল সাপ খেলা দেখান, এটা সড়ক বাদে অন্য যেকোনো স্থানে করতে পারেন। ’

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘নতুন কোনো স্থানে খেলা দেখানো খুবই কঠিন। পরিচিতির একটা বিষয় আছে। আয়-উপার্জনও কম হয়। এখন ভরসা শুধু কারো কাছ থেকে খবর পেয়ে সাপ ধরতে যাওয়া। সেটাও তো রোজ রোজ হয় না। ’ তিনি জানেন না কী করে চলবে তাঁর সামনের দিনগুলো।

এই বিভাগের আরো খবর