বিসমিল্লাহ ছোট একটি শব্দ। বিসমিল্লাহ আমলে অসংখ্য ফজিলত পাওয়া যায়। বিসমিল্লাহ বলে কোনো কাজ শুরু করলে ওই কাজে বরকত হয়। কাজটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর কাছ থেকে রহমত আসতে থাকে। বিসমিল্লাহ পড়ার উদ্দেশ্যই হলো আমি কাজটি আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং আমার কাজটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি আল্লাহর ওপর নির্ভর করছি। যে কাজ আল্লাহর নাম স্মরণের মাধ্যমে শুরু হয়। সেই কাজটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর হেফাজতে থাকে। সমগ্র কর্মটির জিম্মাদারি আল্লাহর হাতে থাকে। বিসমিল্লাহ এমন একটি আমল যার ফজিলত লিখে শেষ করা যাবে না। কুরআনের প্রত্যেকটি সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ রয়েছে। শুধু একটি সূরা ব্যতীত। তবে অন্য একটি সূরাতে বিসমিল্লাহ শব্দটি দুইবার এসেছে।
বিসমিল্লাহকে তাসমিয়াও বলা হয়। তাসমিয়া শুয়ে, বসে ও হাঁটাহাঁটি করার সময় হরদম পাঠ করা যায়। বিসমিল্লাহ শব্দটিকে তাসবিহ হিসেবেও পাঠ করা যেতে পারে। তবে কোনো হারাম কিংবা নিষিদ্ধ কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া জায়েজ নেই। তাফসিরে কবিরে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি জীবনে চার হাজারবার বিসমিল্লাহ শরিফ পাঠ করেছে এমন সাক্ষ্য তার আমলনামায় উল্লেখ থাকলে কেয়ামতের ময়দানে সে আল্লাহর আরশের নিচে স্থান পাবে। আমালিয়াতে কুরআন কিতাবে হাদিস শরিফের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, হজরত আবু বকর রা: কর্তৃক বর্ণিত।
হজরত রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ পাঠ করে, আল্লাহ পাক তার জন্য দশ হাজার নেকি লিখেন এবং আমলনামা থেকে দশ হাজার গুণাহ মাফ করেন এবং দশ হাজার উচ্চ মর্যাদা দান করেন।
তিনি আরো বলেন, ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠকারী কেয়ামতের দিন আল্লাহর রহমতের মধ্যে ডুবে যাবে। হজরত উমর ফারুক রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘যদি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, না হতো তবে সমস্ত সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যেত।’ হজরত ওসমান রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি জীবনে একবার বিসমিল্লাহ পাঠ করে, তার এক বিন্ধু পরিমাণ গুণাহ থাকতে পারে না। এছাড়া আল্লাহর খাস দয়া সূচক নাম রহমান ও রহিম তাসমিয়া যোগে প্রথম প্রচারিত হয়।
বিসমিল্লাহর মর্তবা অনেক। হাদিস শরিফে এসেছে, যখন কোনো ব্যক্তি ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পাঠ করে, তখন শয়তান এমনভাবে গলে যায়, যেভাবে সিসা আগুনে পুড়ে গলে যায়। জাহান্নামের দায়িত্বে নিয়োজিত হজরত মালেক ফেরেশেতাকে আল্লাহ যখন দোজখের বিভিন্ন কক্ষে প্রেরণ করবেন।
হযরত মালেক ফেরেশতার কপালে তখন ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ লিখে দেবেন। যার ফলে হযরত মালেক ফেরেশতা দোজখের প্রত্যেকটি কক্ষে আরামের সাথে চলাফেরা করতে পারবেন। ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এর বরকতে হজরত মালেক ফেরেশতার গায়ে আগুন ক্রিয়া করবে না।
আমালিয়াতের ওপর লেখা সব ক’টিতে কিতাবে বিসমিল্লাহ আমলের ওপর খুব গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। উল্লেখ রয়েছে, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল বেলা একচল্লিশ বার বিসমিল্লাহ পড়ে গায়ে ফুঁক দেয় ওই ব্যক্তি আল্লাহর রহমতে সারাদিন নিরাপদ থাকবে। একইভাবে সন্ধ্যায় যদি একচল্লিশবার বিসমিল্লাহ পড়ে গায়ে ফুঁক দেয়, তবে ওই ব্যক্তি সারারাত নিরাপদ থাকবে।
দুষ্টু জিন, পরী, ভূত, হিংস্র প্রাণী ও শক্র বিসমিল্লাহ আমলকারীর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তবে মনে রাখতে হবে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ আমলকারী এর পরিপূর্ণ ফজিলত পেতে হলে অবশ্যই হালাল খেতে হবে। খালেছ নিয়তে বিসমিল্লাহ পাঠ করতে হবে। সব ধরনের শিরক ও বেদায়াত সম্পৃক্ত নিষিদ্ধ কাজ কিংবা হারাম কাজ-কর্ম থেকে দূরে থাকতে হবে।