ডেস্ক নিউজ : করোনা ভাইরাসের এ বিশেষ পরিস্থিতিতে করদাতাদের ওপর বাড়তি চাপ দিতে চাইছে না সরকার। বরং কিছু ক্ষেত্রে কর ছাড় দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যক্তি করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা বিদ্যমান আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়তে পারে। এটি পৌনে ৩ লাখ বা ৩ লাখ টাকা হতে পারে। এর ফলে দেশব্যাপী প্রায় ২৫ লাখ ব্যক্তি করদাতার করের ভার কিছুটা কমবে।
অন্যদিকে কোম্পানির ক্ষেত্রে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির বিদ্যমান করহার ৩৫ শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ কমতে পারে। এছাড়া করোনাকালে স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতিতে গতি আনতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে আনার ক্ষেত্রে বড়ো আকারের ছাড় দিতে যাচ্ছে সরকার। জানা গেছে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের জরিমানা ছাড়া মাত্র ১০ শতাংশ কর পরিশোধ করে এই টাকা সাদা করার সুযোগ আসতে পারে।
আগামী বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে পরবর্তী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন। বাজেটে কর ছাড়ের এসব ঘোষণা আসতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, বাজেটে রপ্তানির কর ০ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ০ দশমিক ৫০ শতাংশ হতে পারে। রপ্তানির উৎস কর ১ শতাংশ হলেও রপ্তানিকারকরা গত বছর সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করে তা একচতুর্থাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হন। এছাড়া আমদানি ও রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার ও বিনিয়োগের নামে মিথ্যা তথ্য দেখালে বড়ো অঙ্কের জরিমানার প্রস্তাব আসছে বাজেটে। জানা গেছে, এ ধরনের মিথ্যা তথ্য দিলে কিংবা আমদানি ও রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা প্রমাণিত হলে ঐ পরিমাণ অর্থের পাশাপাশি এর ওপর ৫০ শতাংশ জরিমানার বিধান আসতে পারে।
সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের এই সময়ে মানুষের আয় কমে গেছে ব্যাপকভাবে। এ পরিস্থিতি সাধারণ করদাতা ও ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে করের ভার না চাপিয়ে বরং কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য গতবারের চাইতে এবারও বাড়তি কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্য অর্জনে বিদ্যমান কর কাঠামোতে সংস্কারের প্রস্তাব দেবেন অর্থমন্ত্রী। কর কাঠামোর সংস্কারের ফলে অধিকতর স্বচ্ছতা আনার মাধ্যমে বর্ধিত করের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চায় সরকার।
ব্যবসায়ী এবং অর্থনীতিবিদরাও এবারের বিশেষ পরিস্থিতিতে করছাড় দেওয়ার কথা বলে আসছেন। সম্প্রতি এক আলোচনায় মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর বলেন, এবারের বাজেট হোক মানুষ এবং ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রাখার বাজেট। গতকাল অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবে সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাতও নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য কর ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য ড. সৈয়দ মো. আমিনুর করীম দীর্ঘদিন আয়কর সংক্রান্ত বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গতকাল ইত্তেফাককে তিনি বলেন, এবারের বাজেটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষকে করছাড় দেওয়া দরকার। ঘাটতি পোষাতে বাড়তি আয়ের করদাতাদের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বেশি হারে কর আদায় করা যেতে পারে।
বর্তমানে ব্যক্তি করদাতাদের বছরে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর কর দিতে হয় না। এর পরবর্তী আয়ের ওপর বিভিন্ন স্তরে ভিন্ন ভিন্ন হারে কর দিতে হয়। আয় যত বেশি কর হারও তত বেশি হয়। ব্যক্তি করদাতার সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ। গত পাঁচ বছর ধরে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়ী ও করদাতারা দাবি করে আসলেও সরকার করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ায়নি।