ডেস্ক নিউজ : ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (১৩ জুন) রাতে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন এ তথ্য জানান।
শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আওয়ামী লীগ হারালো তৃণমূল থেকে উঠে আসা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন পরীক্ষিত সৈনিককে। তিনি আমৃত্যু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশকে ধারণ করে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তার অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এর আগে শনিবার (১৩ জুন) রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ডায়াবেটিসসহ নানা স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
প্রতি মন্ত্রীর একান্ত সহকারী শেখ নাজমুল হক সৈকত মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সিএমএইচে নেওয়া হয়। সেখানেই রাত পৌনে ১২টার দিকে তার মৃত্যু ঘটে।
শেখ মো. আব্দুল্লাহ ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার কেকানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম আলহাজ শেখ মো. মতিউর রহমান এবং মা মরহুমা আলহাজ মোসাম্মৎ রাবেয়া খাতুন। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
তিনি স্থানীয় গওহরডাঙ্গা হাফেজিয়া মাদ্রাসায় কোরান হেফজের মাধ্যমে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। শিক্ষা জীবন শেষে তিনি সুলতানশাহী কেকানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে অ্যাডভোকেট হিসেবে গোপালগঞ্জ জজকোর্ট এবং ঢাকা জজকোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন।
শেখ আবদুল্লাহ ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে যান। খুলনার আযম খান কমার্স কলেজে প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন। গত শতকের ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে ছয়দফার উত্তাল আন্দোলন চলছিল । এ সময় ১৯৬৬ সালের ছয়দফা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে রাজনীতিতে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হন। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে তিনি আওয়ামী যুবলীগে যোগদান করেন।
তিনি বঙ্গবন্ধুর সরাসরি তত্ত্বাবধানে গঠিত গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭০ এর নির্বাচনে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত হয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের ব্যাপক নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।
আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মো. আবদুল্লাহ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট মুজিব বাহিনীর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি দীর্ঘ দিন যাবত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন।
সর্বশেষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মো. আবদুল্লাহ টেকনোক্রেট কোটায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন।