আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর অঞ্চলের লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চীনা সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষে ভারতীর সেনার নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ জনে। সেইসঙ্গে ভারতের আরও ১১০ জন সেনা গুরুতর আহত হয়েছে। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা কর্তৃপক্ষের। গত ৫৮ বছরে চীনের সঙ্গে ভারতের এই ধরনের ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়নি। দু-পক্ষের সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান ঘাঁটি, রীতিমতো যুদ্ধের দাদামা। ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করছে, এই সংঘর্ষে চীনের ৪৩ জন সৈন্য গুরুতর আহত বা নিহত হয়েছে, যদিও চীনে এ বিষয়ে এখনও মুখ খোলেনি।
এর কয়েক সপ্তাহ আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দেশটি সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী ভারতও প্রস্তুত। যুদ্ধ কখনও কাম্য নয়। কিন্তু নতুন করে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে যদি যুদ্ধ বেঁধেই যায়, সেক্ষেত্রে সামরিক শক্তিতে চীন আর ভারতের বর্তমান অবস্থা দেখে নেয়া যাক। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীন প্রায় সব জায়গাতেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে। সামরিক শক্তির র্যাংকিং পিআরডব্লিউ ইনডেক্স অনুযায়ী, ভারতের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে আছে চীন। যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার ঠিক পরে অর্থাৎ তিন নম্বরে আছে চীন আর ভারত আছে চার নম্বরে।
১৩৮টি দেশের মধ্যে পিআরডব্লিউ ইনডেক্সে তৃতীয় স্থানে থাকা চীনের মোট ২১ লাখ ২৩ হাজার সেনাসদস্য রয়েছে। ভারতের রয়েছে ১৪ লাখ ৪৪ হাজার সেনাসদস্য। তবে রিজার্ভ সৈন্যর সংখ্যায় ভারত এগিয়ে। চীনের পাঁচ লাখ ১০ হাজারের বিপরীতে তাদের রয়েছে ২১ লাখ রিজার্ভ সৈন্য। প্রতিরক্ষা খাতে চীনের বাজেট ২৩৭০ কোটি ডলারের এবং ভারতের ৬১০ কোটি ডলারের। এয়ারক্রাফটের সংখ্যার দিক দিয়ে ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে চীন। চীনের রয়েছে ৩২১০টি এয়ারক্রাফট। বিপরীতে ভারতের রয়েছে ২১২৩টি এয়ারক্রাফট।
যুদ্ধজাহাজের সংখ্যার দিক দিয়েও ঢের এগিয়ে রয়েছে চীন। চীনের রয়েছে ৭৭৭টি যুদ্ধজাহাজ। আর ভারতের রয়েছে ২৮৫টি যুদ্ধজাহাজ। চীনের যুদ্ধবিমানের সংখ্যা ভারতের দ্বিগুণেরও বেশি। চীনের ১২৩২টি যুদ্ধবিমান রয়েছে আর ভারতের আছে ৫৩৮টি। হেলিকপ্টারের সংখ্যাও ভারতের চেয়ে চীনের বেশি। চীনের আছে ৯১১টি হেলিকপ্টার আর ভারতের ৭২২টি।
তবে ট্যাংকের সংখ্যার দিক দিয়ে চীনকে পেছনে ফেলেছে ভারত। চীনের আছে ৩৫০০টি ট্যাংক আর ভারতের ৪২৯২টি। কিন্তু উভয় দেশের সাঁজোয়া যানের তুলনা হয় না বললেই চলে। কেননা চীনের সাঁজোয়া যানের সংখ্যা ৩৩ হাজার, আর ভারতের ৮ হাজার ৬৮৬। স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারির সংখ্যার দিক দিয়ে ভারত ও চীনের তুলনায় চলে না। কারণ যেখানে চীনের ৩৮০০ স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি রয়েছে, সেখানে ভারতের আছে মাত্র ২৩৫টি। তবে ফিল্ড আর্টিলারির সংখ্যায় চীনের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে ভারত। চীনের ৩৮০০টি ফিল্ড আর্টিলারির বিপরীতে ভারতের রয়েছে ৪০৬০টি।
আর রকেট প্রজেক্টর ভারতের চেয়ে ১০ গুণ বেশি আছে চীনের। চীনের যেখানে ২৬৫০টি রকেট প্রজেক্টর রয়েছে, সেখানে ভারতের রয়েছে ২৬৬টি। সুতরাং এখানে চীন প্রায় দশগুণ এগিয়ে। সাবমেরিনের সংখ্যার দিক থেকেও ভারত অনেক পিছিয়ে। চীনের ৭৪টি সাবমেরিনের বিপরীতে ভারতের আছে ১৬টি সাবমেরিন। তবে বিমানবাহী জাহাজের সংখ্যা প্রায় সমান দুই দেশের। চীনের ২টি বিমানবাহী জাহাজের বিপরীতের ভারতের রয়েছে ১টি। চীনের ৩৬টি ডেস্ট্রয়ার আছে। আর ভারতের আছে ১০টি। ফ্রিগেটের সংখ্যার দিক দিয়ে বেশ এগিয়ে চীন। চীনের ৫২টি ফ্রিগেটের বিপরীতে ভারতের আছে মাত্র ১৩টি। আবার রণতরীর সংখ্যার দিক দিয়েও চীন অনেকটাই এগিয়ে। চীনের যেখানে ৫০টি রণতরী আছে, সেখানে ভারতের আছে মাত্র ১৯টি। অর্থাৎ জলপথের যুদ্ধে খুব এগিয়ে রয়েছে চীন। সূত্র : বিবিসি, ডয়চে ভেলে ও এনডিটিভি।