শনিবার, ৯ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুলল সহজ ঋণের ‘বড় জানালা’

ডেস্ক নিউজ : বিশ্ব অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা করতে উন্নয়ন সহযোগীরা সহজ ঋণের ‘বড় জানালা’ খুলেছে। এর আওতায় সুদবিহীন এবং কঠিন শর্ত ছাড়াই বড় গ্রেস পিরিয়ডের (ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড়) ঋণ পাওয়া যাচ্ছে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা ও বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমাতে উন্নয়ন সহযোগীদের এসব ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, করোনার প্রভাবে একদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস রফতানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স কমে যাবে। অন্যদিকে করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতের নানা উপকরণসহ করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার ওপর বড় ধরনের চাপ পড়তে পারে।

এই চাপ মোকাবেলা করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া বৈদেশিক ঋণ। চাহিদা অনুযায়ী বৈদেশিক ঋণের জোগান থাকলে বাজারে ডলারের কোনো সংকট হবে না, বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার মান স্থিতিশীল থাকবে। তখন বৈদেশিক মুদ্রার মানের কারণে আমদানি ব্যয় বাড়বে না। এতে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে। এ ছাড়া করোনার প্রভাব মোকাবেলায় উন্নয়ন সহযোগীরা এখন সহজ শর্তে সুদবিহীন বা কম সুদের ঋণ দিচ্ছে বেশি। এসব ঋণের বিপরীতে সুদ বাবদ ব্যয় কম হবে। গ্রেস পিরিয়ড পাওয়া যাচ্ছে বেশি। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের আমদানি আয় দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হয় না। ঘাটতি থাকে। এ ঘাটতি মেটানো হয় রেমিটেন্স ও বৈদেশিক বিনিয়োগ থেকে পাওয়া বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে। করোনার কারণে রেমিটেন্স ও বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে। ফলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে বড় ঘাটতি তৈরি হবে।

এ ঘাটতি মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। ঘাটতি মোকাবেলা করতে বিদেশি ঋণের বিকল্প নেই। যে কারণে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সরকারকে বিদেশি ঋণ নিতে হবে। এর মধ্যে যদি সুদবিহীন ও সহজ শর্তের ঋণ পাওয়া যায়, তাহলে সেটা তো আরও ভালো। তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক ঋণ মানেই হচ্ছে বড় দায়। এটা শোধ দিতে হবে। ফলে এর সর্বোচ্চ সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ তৈরি করবে না। এর অপব্যবহার হলে অর্থনীতিতে চাপ বাড়বে। সূত্র জানায়, করোনার প্রভাব মোকাবেলা করতে সহজ ঋণের সবচেয়ে ‘বড় জানালা’ খুলেছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ)। তারা তিনটি ঋণের স্কিম চালু করেছে। এগুলো হচ্ছে : দ্রুত ঋণ সুবিধা বা র‌্যাপিড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (আরসিএফ), দ্রুত অর্থায়ন উপকরণ বা র‌্যাপিড ফাইন্যান্সিং ইন্সট্রুমেন্ট (আরএফআই) এবং ত্রাণ সহায়তা বা রিলিফ ট্রাস্ট (আরটি)।

এ তিনটি স্কিমের আওতায় তারা ইতোমধ্যে ১ হাজার ৭২০ কোটি ডলার ছাড় করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ দ্রুত ঋণ সহায়তার আওতায় পেয়েছে ৭৩ কোটি ডলার। এ ঋণের বিপরীতে কোনো সুদ দিতে হবে না, ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণে ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ড। দ্রুত অর্থায়ন উপকরণের আওতায় বাংলাদেশ আরও ঋণ পাওয়ার আশা করছে। আইএমএফ সাধারণত দশমিক ৫০ থেকে ১ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ঋণ সহায়তা ও অনুদান নামে দুটি সহায়তা স্কিম চালু করেছে। এর মধ্যে করোনার প্রভাব মোকাবেলার ঋণের তারা কোনো সুদ নিচ্ছে না। এর মেয়াদ ১৫-২০ বছর। গ্রেস পিরিয়ড ৫ বছর। এডিবি করোনার প্রভাব মোকাবেলার জন্য ২ হাজার কোটি ডলার ঋণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। প্রয়োজনে এর পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে। বাংলাদেশ কয়েকটি খাতে প্রায় ৩৫ কোটি ডলার পেয়েছে। তারা ইতোমধ্যে অনুদান হিসেবে ৩ কোটি ডলার ছাড় করেছে। এ ছাড়া এডিবি বেসরকারি খাতেও ঋণ দেবে।

বিশ্বব্যাংক করোনার প্রভাব মোকাবেলায় বহুমুখী ঋণের ব্যবস্থা করেছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য খাত, খাদ্য নিরাপত্তা, অবকাঠামো উন্নয়ন, দরিদ্রদের সহায়তা, প্রাণিসম্পদ খাত ও বাজেট সহায়তা বাবদ তারা ঋণ দিচ্ছে। তারা ঋণের বিপরীতে নামমাত্র সার্ভিস চার্জ নিলেও ঋণের গ্রেড পিরিয়ড দিচ্ছে ৫ বছর। মেয়াদ ১০-২০ বছর। শর্ত থাকবে খুবই কম। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ১২২ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন দিয়েছে। এ ছাড়া এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন বিনিয়োগ ব্যাংক, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা করোনার প্রভাব মোকাবেলায় ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। তিনটি সংস্থা থেকে বাংলাদেশ বড় অঙ্কের ঋণ পাচ্ছে। এর মধ্যে এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক ২০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক জ্বালানি তেল আমদানিতে ঋণ দিচ্ছে। জাইকা প্রতি তিন মাস পরপর ৫-৭ কোটি ডলারের ঋণের কিস্তি ছাড় করছে।

এই বিভাগের আরো খবর