শুক্রবার, ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায় আক্রান্ত হলে কী করবেন, কোথায় যাবেন?

স্বাস্থ্য ডেস্ক : করোনাভাইরাস নতুন ধরনের এক মহামারী। এই রোগের উপসর্গ দেখা দিলে কী করবেন, কোথায় চিকিৎসা মিলবে এসব নিয়ে অনেকেই আতঙ্কে থাকেন। তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে বাসাতেই প্রাথমিক চিকিৎসা করা যায়। এছাড়া অনেকগুলো হাসপাতালে বিনা খরচে করোনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে রেখেছে সরকার। তাই আতঙ্কিত হবার দরবার নাই, আপনি কিভাবে সুস্থ হবেন সেদিকে নজর দিন।

এই সময়ে কারো জ্বর এবং সাথে শুকনো কাশি অথবা শরীর ব্যথার মত দুয়েকটি উপসর্গ ও লক্ষণ দেখা দিলেই স্বাভাবিকভাবেই মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। আর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হাসপাতালে যাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে থাকেন।

এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ হচ্ছে,

প্রথমেই আলাদা হয়ে যান
ভাইরাস সংক্রমণের প্রথম লক্ষণ হলো জ্বর এবং শুকনো কাশি। এছাড়া থাকতে পারে শরীরের পেশীতে ব্যথা, গলা ব্যথা, স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি না থাকা, শ্বাসকষ্ট, কখনো পেট খারাপ ও বমি বা বমি বমি ভাব। নিজের মধ্যে এ রকম একাধিক লক্ষণ দেখা দিলে শুরুতেই ‘সেলফ-আইসোলেশনে’ চলে যান, অর্থাৎ নিজেকে পরিবারের বাকি সদস্যদের কাছ থেকে পুরোপুরি আলাদা করে ফেলুন। অন্যদের থেকে অন্তত ছয়ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন এবং মাস্ক পড়ুন। খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও ওষুধ ঘরের দরজার বাইরে রেখে যাবেন পরিবারের সদস্যরা। এতে পরিবার, কর্মস্থল, এবং আশপাশের মানুষের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যাবে।

নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে
সাধারণ জ্বরের সঙ্গে আরো এক বা একাধিক উপসর্গ দেখা গেলে কোভিড-১৯ ধরে নিয়েই ব্যবস্থা নিতে হবে অর্থাৎ নমুনা পরীক্ষা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি এবং বেসরকারি উভয় খাতে নমুনা পরীক্ষা করানো যায়। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ৬২টি সরকারি পরীক্ষাগারে করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। তার মধ্যে ৩২টি ঢাকায়। সেক্ষেত্রে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া হটলাইন নম্বরে ফোন দিয়ে, অথবা স্থানীয় সিভিল সার্জন কিংবা সিটি কর্পোরেশনে যোগাযোগ করতে হবে।

গরম পানির গার্গল ও ভাপ
নমুনা পরীক্ষা করতে দিয়েছেন কিন্তু তার রিপোর্ট আসা পর্যন্ত বসে না থেকে প্রতিদিন নিয়ম করে কিছু কাজ করতে হবে। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে গরম পানির গার্গল করা এবং চিকিৎসকেরা বলছেন দিনে অন্তত চার থেকে ছয়বার গার্গল করুন। এছাড়া দিনে কয়েকবার গরম পানির ভাপ নিন।

পুষ্টিকর খাবার খান
এ সময় ইম্যুনিটি অর্থাৎ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এমন খাবার খেতে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এজন্য প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি করে খান। স্যুপ খেতে পারেন। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন।

চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা সামাজিক মাধ্যমে কারো শেয়ার করা প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধ খেতে নিষেধ করছেন। টেলিফোনে কিংবা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, নিজের উপসর্গ ও লক্ষণ অনুযায়ী ওষুধ খাবেন। তবে ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি জাতীয় ওষুধের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, তাই সেটি প্রেসক্রিপশন ছাড়াও খেতে পারেন।

শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা খেয়াল রাখুন
এ সময় শরীরে অক্সিজেনের মাত্রার ওঠানামা খেয়াল রাখতে হবে। পালস অক্সিমিটার নামে ছোট একটি মেডিকেল যন্ত্র এক্ষেত্রে হাতের কাছে রাখতে পারেন। আঙুলের মাথায় লাগিয়ে হৃৎস্পন্দন ও শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা মাপা যায়। সাধারণত পালস অক্সিমিটারে ৯৫ থেকে ১০০ শতাংশ অক্সিজেন মাত্রাকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ শতাংশের কম হলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়, যার ফলে শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, বুক-ব্যথা, কিংবা হৃৎস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে।তখন অক্সিজেন দিতে হবে। তবে, শ্বাসকষ্ট না হলে হাসপাতালে যাবার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।

মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে
কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন বেশিরভাগ মানুষ। চিকিৎসকেরা মনে করেন এসময় রোগীর মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে এবং তাকে সাহস দিতে হবে। ইতিবাচক চিন্তা করতে সহায়ক কাজকর্ম করা এবং প্রয়োজনে মনোবিদের সাহায্য নিতে হবে।

ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের বিশেষ সতর্কতা
কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা অ্যাজমার মতো সমস্যা আছে, কিংবা যাদের বয়স বেশি তাদের ঝুঁকি অন্য রোগীদের বেশি। সে জন্য আপনাকে বাড়তি কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কোভিড-১৯ রোগীর জন্য যা যা করনীয়, তাদের জন্যও সেগুলো প্রযোজ্য হবে। খেয়াল রাখতে হবে শরীর যাতে পানিশূন্য হয়ে না যায় এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম করুন। সেই সঙ্গে আগে থেকে যেসব ওষুধ চলছিল সেগুলো চালিয়ে যেতে হবে।

কোথায় পাবেন করোনা চিকিৎসা নিতে
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ৬২টি সরকারি পরীক্ষাগারে কোভিড-১৯ পরীক্ষা হচ্ছে। রাজধানীসহ সারাদেশে ৪৪টি কিয়স্ক বুথ বসানো হয়েছে। এই বুথগুলোতে চলছে সন্দেহজনক করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ। এই পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পারবেন আপনি করোনা পজেটিভ না নেগেটিভ।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, এখন ৫০ শয্যার বেশি যে কোনো হাসপাতাল কোভিড-ননকোভিড দুই ধরনের রোগীই সেবা পাবেন। জেলাভিত্তিক যে হাসপাতালগুলো রয়েছে প্রতিটি হাসপাতালে করোনা ইউনিট খোলা চালু আছে। এখানে গেলেই টেস্ট ও চিকিৎসা ব্যবস্থা বিনামূল্যে পাবেন।

এছাড়া করোনা উপসর্গ দেখা দিলে ফোনের মাধ্যমেও আপনি সহায়তা নিতে পারেন। এক্ষেত্রে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) নম্বর: ১০৬৫৫ ও ০১৯৪৪৩৩৩২২২, স্বাস্থ্য বাতায়নের হটলাইন নম্বর ১৬২৬৩, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইন নম্বর ৩৩৩-এ যোগাযোগ করতে পারেন।

কোভিড-১৯ উপসর্গের রোগীরা কোথায় গেলে কী ধরনের চিকিৎসা পাবেন। সে সম্পর্কে এবার জেনে নিন…

* ঢাকা মেডিকেল কলেজ-২ (নতুন ভবন) বা বার্ন ইউনিটের নিচের জরুরি বিভাগে প্রথমে রোগীকে নিয়ে যেতে হবে। এই হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৯১০। এর মধ্যে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের শয্যা সংখ্যা ৪৮। এখানে ডয়ালাইসিস মেশিন আছে ৩০টি।

* রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ৫০০ শয্যার, আইসিইউ শয্যা ২৭, ডায়ালাইসিস মেশিন আছে ৩২টি।

* সবুজ থানায় রয়েছে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এখানে শয্যা সংখ্যা ৫০০, আইসিইউ শয্যা ১০টি, ডায়ালাইসিস মেশিন ৩২টি।

* উত্তরায় আছে বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল। এই হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ২৫০, আইসিইউ শয্যা ২৬টি ও পাঁচটি ডায়ালাইসিস মেশিন।

* মহানগর জেনারেল হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১৫০, আইসিইউ শয্যা ৫, ডায়ালাইসিস সুবিধা নেই।

* আনোয়ার খান মর্ডার্ন হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ২০০, দশটি আইসিইউ ও ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা আছে। এখানে আইসোলেশন শয্যা আছে ৩০টি।

* হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৪০০, আইসিইউ শয্যা ১০টি, ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা আছে।

* রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় ৫০টি করে শয্যা আছে, প্রতিটিতে তিনটি করে আইসিইউ শয্যা আছে। তবে ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা নেই।

* নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে সাজেদা ফাউন্ডেশনে ৫০টি শয্যা আছে, আইসিইউ শয্যা আছে পাঁচটি। ডায়ালাইসিস মেশিন আছে ১টি।

এছাড়া মাঝারি উপসর্গের রোগীদের জন্য রয়েছে রেলওয়ে হাসপাতাল। যাদের শুধু অক্সিজেন হলেই চলবে, তাঁদের জন্য এই হাসপাতাল। এখানে ৪০টি শয্যা রয়েছে, তবে এখানে আইসিইউ বা ডায়ালাইসিস সেবার ব্যবস্থা নেই।

এই বিভাগের আরো খবর