শুক্রবার, ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কারাগারের সব বন্দিরা পাচ্ছেন স্যানিটাইজার, মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস

ডেস্ক নিউজ :  ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সবকটি কারাগারে বন্দিদের করোনামুক্ত রাখতে কারাপ্রশাসন বেশ কিছু কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। প্রত্যেক বন্দির জন্য তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি মাস্ক, স্যানিটাইজার, হ্যান্ডগ্লাভস, স্প্রে মেশিন, থার্মোমিটার ও হ্যান্ডওয়াশ সরবরাহ করা হচ্ছে।

অধিক সতর্কতা অবলম্বনের কারণে কারাবন্দিদের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে না বলে জানায় কারা কর্তৃপক্ষ। কঠোর অনুশাসনের মধ্যে কারাগারে বন্দিদের রাখা হয়েছে। নতুন কোনো আসামি কারাগারে ঢোকার পরই তাকে অন্য বন্দিদের কাছ থেকে আলাদা করে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। নতুন আসা কোনো বন্দির জ্বর, সর্দি, কাশি থাকলে তাকে প্রথমেই করোনা টেস্ট করা হচ্ছে এবং আলাদা সেলে রেখে ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি কারাগারে তৈরি করা হয়েছে মেডিকেল টিম ও আইসোলেশন ওয়ার্ড।

করোনা শুরুর পর আদালতের নির্দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১৯ হাজার নতুন আসামি দেশের বিভিন্ন কারাগারে পাঠানো হয়। সব মিলিয়ে এখন আসামি রয়েছেন ৭২ হাজারের মতো। করোনা শুরুর আগে মোট বন্দি আসামি ছিলেন ৮৮ হাজার। সরকারের বিশেষ নির্দেশে ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে ৩৫ হাজার বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়।

কেন্দ্রীয় কারা অধিদফতরের মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা পাশা যুগান্তরকে বলেন, আমি এক কঠোর অনুশাসনের মধ্যে কারাগারে বন্দিদের রেখেছি। একজনের থেকে আরেকজন যেন করোনায় আক্রান্ত না হয় তার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। যে কারণে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের প্রায় সব ক’টি কারাগারে কোনো সংক্রমণ নেই। আদালতে জামিন না পাওয়া নতুন তিনজন বন্দি আক্রান্ত হন ঢাকার বাইরের কারাগারে। তবে তারাও সুস্থ। তবে তাদের সংস্পর্শে আসার কারণে কারাগারের বেশ কিছু প্রহরী করোনা আক্রান্ত হন বলে জানান তিনি ।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পাশা বলেন, আমি কারাগারের ঢোকার পথে ‘ফুটবাথ’ চালু করেছি। যাতে করে নতুন আসা আসামিরা পা ভিজিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারে। করোনা মহামারী দেখা দিলে গত ২৪ মার্চ থেকে আসামিদের আদালতে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছি। করোনার কারণে বন্দিদের স্বজনরা দেখা করতে পারছেন না। এ কারণে বন্দিরা পাঁচ মিনিট করে কাছের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন।

তিনি জানান, কক্সবাজার ছাড়া সব কারাগারেই করোনা উপসর্গ দেখা দিলে যে কোনো বন্দিকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা আছে। দেশে বর্তমানে ৬৮টি কারাগার রয়েছে। গত তিন মাসে ১২৮ জন কারারক্ষী করোনায় আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৭৮ জন।

কারা মহাপরিদর্শক আরও জানান, গত ২৫ এপ্রিল পেরুর একটি কারাগারে দাঙ্গায় ৯ জন বন্দি নিহত হয় এবং এ ঘটনায় ৬৭ জন কারারক্ষী আহত হয়। ভারতের কলকাতার দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে করোনা নিয়ে উদ্বিগ্ন বন্দিদের সঙ্গে কারা কর্মচারীদের সংঘর্ষে এক কয়েদির মৃত্যু হয়। গত ৩০ মার্চ থাইল্যান্ডের একটি কারাগারে করোনাভাইরাস আতংকে বড় ধরনের দাঙ্গা সংঘটিত হয়। গত ২৩ মার্চ কলম্বিয়ার বোগাটার একটি কারাগারে করোনাভাইরাস আতংকে সৃষ্ট দাঙ্গায় অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ৬৮টি কারাগারে করোনার কারণে এখনও পর্যন্ত বন্দিদের মধ্যে কোনো উত্তেজনা, আতংক বা দাঙ্গার ঘটনা ঘটেনি। এটা একমাত্র সম্ভব হয়েছে প্রথম থেকে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়ার কারণে। বন্দিদের করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বন্দি সাক্ষাৎ সাময়িকভাবে বন্ধ। তবে বন্দিরা যাতে মানসিকভাবে বিচলিত না হয় ও হতাশাগ্রস্ত না হয় তার জন্য পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্য স্থাপন করা হয়েছে টেলিফোন বুথ। এতে বন্দিরা সপ্তাহে একদিন ৫মিনিট করে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারছে। এবং স্থানীয় কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বন্দিদের কাউন্সেলিংও করা হচ্ছে যাতে তারা বিপদগ্রস্ত না হয়।

এই বিভাগের আরো খবর