আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যতই দিন যাচ্ছে ততই ব্যাপকতা ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। ভয়াল রূপ ধারণ করছে দিন দিন। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়লেও প্রতিদিনের হারে তা কমেছে। গত তিন দিনের হিসেবে দেখা যায় সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমছে। বিশ্বের ১১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৪৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের নিয়মিত পরিসংখ্যানে (বাংলাদেশ সময় সোমবার সকাল আটটা) জানানো হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে ২ লাখ ১৯ হাজার ৩৪৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আগের দিন যা ছিল ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৪৮ জন, তার আগের দিন ছিল প্রায় আড়াই লাখের মতো। ফলে আগের দিনের চেয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার কম মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন।
মৃতের সংখ্যা হিসেব করে দেখা যায়, গত তিন দিনে কমেছে মৃতের সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৪ হাজার ৭৯ জন আগের দিন ছিল ৫ হাজার ৪৮২ এবং তারও আগের দিন ছিল ৭ হাজার ৩৭৯ জন। মোট মৃতের সংখ্যা ৬ লাখ ৮ হাজার ৯০২। মোট সুস্থ হওয়ার সংখ্যা ৮৭ লাখ ৩৫ হাজার ১৫৮ জন।
যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকায় সংক্রমণের তীব্রতা বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দেশগুলোতে সংক্রমণ এখনও চূড়ায় পৌঁছেনি। অর্থাৎ এই চারটি দেশে আগামীতে আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে যাচ্ছে করোনা। এর মধ্যে ইউরোপের কয়েকটি দেশ ও উৎপত্তিস্থল চীনে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে দেশগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলেও পুরোপুরি করোনা মুক্ত হচ্ছে না। এখনও প্রতিদিনই কমবেশি সংক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে মোট শনাক্ত ৪০ লাখ হতে আর দেড় হাজার বাকি আছে। শনাক্তের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ২১ লাখ। দেশটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ৭৯ হাজার ৫৩৩ জনের। ব্রাজিলে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ হাজার ৬৫০ জন যা আগের দিন ছিল ২৬ হাজার ৫৪৯ জনে। তিন দিন আগে আক্রান্তের এ সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজার ৮২৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৭১৬ জন যা আগের দিন ছিল ৮৮৫ জন। ৮৮৫ জনের সংখ্যাটাও পূর্বের দিনের তুলনায় প্রায় ৫০০ কম।
বিশ্ব তালিকায় শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৬৫ হাজার ২৭৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন যা আগের দিন ছিল ৬৩ হাজার। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৪১২ জন। আগের দিনের তুলনা ৩ হাজারের বেশি কম। গত দিন মারা গিয়েছিলেন ৩ হাজার ৭৪৯ জন। তারও আগের দিন মারা যান ৯২৭ জন। এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট মারা গেছেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৮৯ জন মানুষে। দেশটিতে মোট রোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৯৮ হাজার ৫৫০ জন।
রাশিয়ায় সংক্রমিতের সংখ্যা ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৪৬ জন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার ৩৪২ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুতেও আক্রান্ত ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৫৯০ জনের। যেখানে মৃতের সংখ্যা ১৩ হাজার ১৮৭ জন।
সংক্রমণে যুক্তরাজ্য, স্পেনের পর মেক্সিকোকেও ছাড়িয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। যেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৩২৮ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৩৩ জনের। চিলিতেও সংক্রমণ ৩ লাখ ৩০ হাজার ৯৩০ জন। এর মধ্যে ৮ হাজার ৫০৩ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনা। মেক্সিকোয় আক্রান্ত ৩ লাখ ৪৪ হাজার ২২৪ জন। প্রাণ গেছে ৩৯ হাজার ২৮৪ জনের। নিয়ন্ত্রণে আসা স্পেনে আক্রান্ত ৩ লাখ ৭ হাজার ৩৩৫ জন। মারা গেছেন ২৮ হাজার ৪২০ জন।
যুক্তরাজ্যে সংক্রমিতের সংখ্যা ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭৮৮ জন। যেখানে মৃত্যু হয়েছে ৪৫ হাজার ৩০০ জনের। ইতালিতে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৪৩৪ জন। এর মধ্যে পৃথিবী ছেড়েছেন ৩৫ হাজার ৪৫ জন। জার্মানিতে করোনা রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ২ হাজার ৮৪৫ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ৬১৮ জনের। তুরস্কে করোনার ভুক্তভোগী ২ লাখ প্রায় ১৯ হাজার ৬৪১ জন। সেখানে প্রাণহানি ঘটেছে ৫ হাজার ৪৯১ জনের।
মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক ইরানে করোনার শিকার ২ লাখ ৭৩ হাজার ৭৮৮ জন। প্রাণহানি ঘটেছে ১৪ হাজার ১৮৮ জনের। সৌদি আরবে এখন পর্যন্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৪৮৬ জন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানে করোনার শিকার ২ লাখ ৬৩ হাজার ৪৯৬ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৫৬৮ জনের।
এদিকে গতকাল রোববার দুপুরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যে, দেশে আক্রান্ত ২ লাখ ৪ হাজার ৫২৫ জন। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬১৮ জনে।
উল্লেখ্য, একদিনে বিশ্বেও করোনায় শনাক্ত হয়েছেন ২ লাখ ১৯ হাজারের বেশি। এ নিয়ে বিশ্বে মোট শনাক্ত ১ কোটি ৪৬ লাখের বেশি। করোনা মহামারিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন প্রায় ৬ লাখ ৯ হাজার মানুষ। আর সুস্থ হয়েছেন ৮৮ লাখের বেশি মানুষ। গত ১১ মার্চ করোনা ভাইরাস সংকটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এর আগে গেল বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে মানবদেহে প্রথম এ ভাইরাসটি ধরা পড়ে।