বৃহস্পতিবার, ৭ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বহুল ব্যবহৃত ৫ মুসলিম আবিষ্কার

ডেস্ক নিউজ : আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিম অবদান অসামান্য। মুসলিম বিশ্বে ঔপনিবেশিক শাসন ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মুসলিমরা সমকালীন বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়লেও তারা রিক্তহস্ত নয়; বরং সমকালে বহুল ব্যবহৃত অনেক কিছুই মুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার। এমন গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি আবিষ্কার নিম্নে তুলে ধরা হলো।

এক. প্যারাশুট

প্যারাশুট শূন্যে ভাসার আধুনিক যন্ত্রবিশেষ। বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজে তা ব্যবহৃত হয়। বলা হয়ে থাকে প্যারাশুটের আবিষ্কারক লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। তিনিই প্রথম প্যারাশুটের একটি জটিল নকশা প্রণয়ন করেন। তাঁর নকশা করা প্যারাশুটটি বহনকারীর ভর নিখুঁতভাবে বহন করতে সক্ষম ছিল। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, পৃথিবীতে প্রথম কোন ব্যক্তি শূন্যে উড়েছিল এবং কে সবার আগে প্যারাশুট আবিষ্কারের ধারণা দেন, তাহলে অবশ্যই মুসলিম বিজ্ঞানী আব্বাস ইবনু ফিরনাসের নাম উচ্চারিত হবে। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চিরও প্রায় আট শ বছর আগে ৮৭৫ সালে তিনি আকাশে ওড়েন। বিমান আবিষ্কারেরও প্রথম চিন্তক তাঁকেই ভাবা হয়। আব্বাস ইবনু ফিরনাস ১০ মিনিট উড়েছিলেন। পাখির পালক জড়ো করে তা দিয়ে পাখা বানিয়ে স্পেনের কর্ডোভার উঁচু পাহাড় ‘জাবাল আল-আরুস’ থেকে উড়াল দিয়েছিলেন। উড্ডয়নকালে তাঁর বয়স ছিল ৭০ বছর। নামার সময় আব্বাস ইবনু ফিরনাস দেখলেন তিনি গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। তাঁর মনে হলো পাখির লেজের কথা। কিন্তু তিনি লেজ বানাননি। সজোরে আছড়ে পড়লেন মাটিতে। আহত হলেন। এর পরও ১২ বছর বেঁচে ছিলেন, কিন্তু ফের উড়াল দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না।

দুই. ক্যামেরা

ক্যামেরা বা আলোকচিত্র গ্রহণ ও ধারণের যন্ত্র আবিষ্কারেও রয়েছে মুসলিম অবদান। দৃশ্যমান স্থির বা গতিশীল ঘটনা ধরে রাখার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। আধুনিক আবিষ্কারগুলোর মধ্যে ক্যামেরা বহুল ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয়। মোবাইল ফোনের কল্যাণে তা এখন মানুষের হাতে হাতে। মুসলিম বিজ্ঞানী নাম ইবনুল হাইসাম। ইরাকের এই বিজ্ঞানী ১০২১ সালে তাঁর রচিত আল মানাজির গ্রন্থে সর্বপ্রথম ক্যামেরা উদ্ভাবনের ধারণা দেন। তবে পূর্ণাঙ্গ ক্যামেরা আবিষ্কার হতে আরো বহু বছর কেটে যায়। এরপর কয়েক ধাপে ক্যামেরায় নতুনত্ব যুক্ত করেন বিজ্ঞানীরা। অবশেষে ১৯৭৫ সালে কোডাকের স্টিভেন স্যাসোন প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা জনসম্মুখে নিয়ে আসেন।

তিন. অস্ত্রোপচারের নানা যন্ত্র

অস্ত্রোপচারের বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কারে মুসলিম বিজ্ঞানীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। দশম শতাব্দীর মুসলিম সার্জন আল-জাওয়াহিরি আধুনিক যুগে ব্যবহৃত হয় এমন অনেক যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। তাঁর আবিষ্কৃত সুই, রেজারসহ অন্তত দুই শ যন্ত্রের গুরুত্ব আধুনিককালের সার্জনরা স্বীকৃতি দিয়েছেন। তা ছাড়া ক্ষতস্থান সেলাইয়ের জন্য তিনি এক প্রকার থ্রেড বা সুতা তৈরি করেন, যা সেলাইয়ের পরে আস্তে আস্তে শরীর থেকে একা একাই পৃথক হয়ে যায়। ক্যাপসুলের আবিষ্কারকও আল-জাওয়াহিরি।

ত্রয়োদশ শতাব্দীর অপর মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে নাফিস রক্তসঞ্চালনের বিষয়টি সবার আগে সামনে নিয়ে আসেন। তাঁর সময়কার মুসলিম চিকিৎসকরা আফিম ও অ্যালকোহলের সংমিশ্রণে এমন এক সুই উদ্ভাবন করেন, যা দিয়ে যে কাউকে বেহুঁশ ও অচেতন করা যেত। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানেও এই পদ্ধতির ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়।

চার. কফি

সারা বিশ্বে কফি জনপ্রিয় একটি পানীয়। কফির আবিষ্কারক খালেদি। তিনি কোনো বিজ্ঞানী নন, সাধারণ এক মুসলিম রাখাল। আরব-ইথিওপীয় খালেদি নবম শতকে জনপ্রিয় এই পানীয়র ব্যবহার শুরু করেন। খালেদির মেষগুলো প্রায়ই ক্লান্ত হয়ে যেত। হঠাৎ একদিন তিনি দেখলেন, মেষগুলোর ক্লান্তিভাব দূর হয়ে গেছে। উদ্যম ও চঞ্চলতায় ভরে উঠেছে সেগুলো। কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তিনি লক্ষ করলেন, মেষগুলো চেরি ফলের মতো কী যেন খাচ্ছে। ধর্মপ্রাণ খালেদি গাছ থেকে কয়েকটি ফল নিয়ে দ্রুত হাজির হলেন স্থানীয় মসজিদের ইমামের কাছে। ফলগুলো কাঁচা খাওয়া সম্ভব হবে না ভেবে ইমাম পাশে রাখা জ্বলন্ত আগুনে ফেললেন। দেখলেন আগুনের ভেতর থেকে বিমল ঘ্রাণ বের হচ্ছে। পরে ইমামের শিষ্যরা ফলগুলো সিদ্ধ করে গরম পানিসহ পান করলেন। এভাবেই পৃথিবীর পানীয় হিসেবে কফির ব্যবহার শুরু হয়।

পাঁচ. সাবান

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা এলেই সাবানের প্রসঙ্গ চলে আসে। শরীর ও কাপড়চোপড় পরিষ্কার করতে সাবানের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে পৃথিবীতে। মানবসমাজে বহু আগে থেকেই সাবানের ব্যবহার শুরু হয়েছে। সাবানজাতীয় বস্তু ব্যবহারের প্রথম প্রমাণ মেলে খ্রিস্টপূর্ব দুই হাজার ৮০০ বছর আগে। প্রাচীন ব্যাবিলনে। কিন্তু সুগন্ধি সাবানের উদ্ভব হয়েছে মুসলিম অধ্যুষিত মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্র করে। প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতায় সাবান তৈরি ও ব্যবহারের ব্যাপক প্রচলন ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় প্রাচীন সিরিয়ার আলেপ্পো শহরের অধিবাসীদের ছিল উত্কৃষ্ট মানের সাবান তৈরির দক্ষতা। সিরিয়াসহ বহু মুসলিম দেশে সাবান উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে গড়ে ওঠে। রঙিন সুগন্ধি সাবান, ডাক্তারি সাবান তৈরি ও রপ্তানি হতো সিরিয়ার বিভিন্ন শহর থেকে। নাবলুস, দামেস্কো, আলেপ্পো ও সারমিন ছিল সাবান তৈরিতে বিখ্যাত। তারা সাবান তৈরিতে ব্যবহার করত জলপাইয়ের তেল ও আলকালি। কখনো কখনো এতে যোগ করা হতো ন্যাট্রন। আর আধুনিক সাবান তৈরির প্রস্তুত প্রণালী আবিষ্কার করেন মুসলিম বিজ্ঞানী আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে জাকারিয়া আল রাজি।

সূত্র : ডন

এই বিভাগের আরো খবর