বুধবার, ২৪শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রথম যাঁরা মুসলিম হন

ডেস্ক নিউজ : বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন হওয়ার পেছনে বহু মানুষের ত্যাগ রয়েছে। মক্কায় ইসলাম আসার পর প্রথম যাঁরা মুসলিম হয়েছেন, তাঁদের অনেকের ওপর অমানবিক নির্যাতন-নিপীড়ন চলতে থাকে। কিন্তু তাঁরা শত নির্যাতন সত্ত্বেও এক কদম পরিমাণ ইসলাম থেকে পিছু হটেননি। সেসব নির্যাতিত সাহাবির সংক্ষিপ্ত ঘটনা এখানে উল্লেখ করা হলো—

ওসমান ইবনে আফফান (রা.) ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর চাচা তাঁকে খেজুরের চাটাইয়ের মধ্যে জড়িয়ে ধোঁয়া দিত। (রহমাতুল লিল আলামিন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৭)

মাসয়াব ইবনে ওমায়ের (রা.)-এর মা তাঁর ইসলাম গ্রহণের খবর শোনার পর পুত্রের পানাহার বন্ধ করে দেন এবং তাঁকে ঘর থেকে বের করে দেন। মাসয়াব (রা.) ছোটবেলা থেকে স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে আরাম-আয়েশে জীবন কাটিয়েছেন, পরিস্থিতির কারণে তিনি এমন অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলেন যে তাঁর গায়ের চামড়া খোলস ছাড়ানো সাপের গায়ের মতো হয়ে গিয়েছিল। (রহমাতুল লিল আলামিন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৮)

বিলাল (রা.) ছিলেন উমাইয়া ইবনে খালফের ক্রীতদাস। ইসলাম গ্রহণের পর উমাইয়া বিলাল (রা.)-কে গলায় দড়ি বেঁধে উচ্ছৃঙ্খল বালকদের হাতে তুলে দিত। বালকরা তাঁকে মক্কার বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেত। এমন করায় তাঁর গলায় দড়ির দাগ পড়ে যেত। উমাইয়া নিজেও তাঁকে বেঁধে নির্মম প্রহারে জর্জরিত করত। এরপর উত্তপ্ত বালুর ওপর জোর করে শুইয়ে রাখত। এ সময় তাঁকে অনাহারে রাখা হতো, পানাহার কিছুই দেওয়া হতো না, কখনো কখনো দুপুরের রোদে মরু বালুকার ওপর শুইয়ে বুকের ওপর ভারী পাথর চাপা দিয়ে রাখত। এ সময় বলত, তোমার মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত এভাবে ফেলে রাখা হবে। বাঁচতে চাইলে মুহাম্মদের পথ ছাড়ো। কিন্তু তিনি এমন কষ্টকর অবস্থায়ও বলতেন, ‘আহাদ’, ‘আহাদ’ (আল্লাহ একক, আল্লাহ একক)। তাঁর ওপর নির্যাতন চলতে দেখে আবু বকর (রা.) একদিন খুবই ব্যথিত হলেন। তিনি বিলাল (রা.)-কে একটি কালো ক্রীতদাসের পরিবর্তে মতান্তরে ২০০ দিরহামের পরিবর্তে ক্রয় করে মুক্তি দেন। (রহমাতুল লিল আলামিন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৭; তালাকিহে ফুহুম, ইবনে হিশাম, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩১৮)

আম্মার ইবনে ইয়াসের (রা.) ছিলেন বনু মাখজুমের ক্রীতদাস। তিনি ও তাঁর মা-বাবা ইসলাম গ্রহণের পর তাঁদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন শুরু করা হয়। আবু জেহেলের নেতৃত্বে পৌত্তলিকরা তাঁদের উত্তপ্ত রোদে বালুকাময় প্রান্তরে শুইয়ে কষ্ট দিত। একবার তাঁদের এভাবে শাস্তি দেওয়া হচ্ছিল। এমন সময় নবী (সা.) সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, হে ইয়াসের পরিবার, ধৈর্য ধারণ করো, তোমাদের ঠিকানা জান্নাত।

অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ইয়াসের (রা.) ইন্তেকাল করেন। তাঁর স্ত্রী আম্মার (রা.)-এর মা সুমাইয়া (রা.)-এর লজ্জাস্থানে দুর্বৃত্ত আবু জেহেল বর্শা নিক্ষেপ করে। এতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তিনি ছিলেন ইসলামের প্রথম শহীদ। (ইবনে হিশাম, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩২০)

খাব্বাব ইবনে আরত (রা.) খোজায়া গোত্রের উম্মে আনসার নামে এক নারীর ক্রীতদাস ছিলেন। পৌত্তলিকরা তাঁর ওপর নানাভাবে নির্যাতন চালাত। তাঁকে মাটির ওপর টানত। (রহমাতুল লিল আলামিন, প্রথম খণ্ড, পৃ. ৫৭)

পৌত্তলিকরা বীভৎস উপায়েও ইসলাম গ্রহণকারীদের শাস্তি দিত। তারা কোনো কোনো সাহাবিকে উট ও গাভির কাঁচা চামড়ায় জড়িয়ে বেঁধে রোদে ফেলে রাখত। কাউকে লোহার বর্ম পরিয়ে তপ্ত পাথরের ওপর শুইয়ে রাখত। কারো ইসলাম গ্রহণের খবর পেলে পৌত্তলিকরা নানা উপায়ে তাঁর ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাত। মোটকথা, আল্লাহর মনোনীত দ্বিন ইসলাম গ্রহণকারীদের ওপর যেসব নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতন করা হয়েছিল, তার তালিকা খুবই দীর্ঘ এবং বড় বেদনাদায়ক।

এই বিভাগের আরো খবর