মঙ্গলবার, ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আইনি কাঠামো শক্তিশালী করার পরামর্শ, পাচারের টাকা ফেরানো সংক্রান্ত কমিটির প্রতিবেদন

ডেস্ক নিউজ : বিদেশে পাচার করা টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে আইনি কাঠামো আরও শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছে অর্থ উদ্ধার কার্যক্রমের কৌশল নির্ধারণে গঠিত কমিটি। ওই কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, পাচার করা টাকা উদ্ধার করতে হলে এর সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা যেমন বাড়াতে হবে, তেমনই বাড়াতে হবে কাজের মধ্যকার সমন্বয়। যেসব দেশে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হয়, ওইসব দেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোর কূটনৈতিক তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। এছাড়া পাচার করা টাকার বিষয়ে দায়ের করা মামলাগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে একটি ডাটাবেজ তৈরি করাও জরুরি।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কঠিন হলেও পাচার করা টাকা কিছুটা ফেরানো সম্ভব। এজন্য সবার আগে থাকতে হবে রাজনৈতিক অঙ্গীকার। রাজনৈতিকভাবে যদি সিদ্ধান্ত হয় যে, পাচার করা টাকা ফেরানো হবে, তাহলে কাঠামা তৈরি করা খুব বেশি কঠিন নয়। এখন বিশ্বব্যাপী মানি লন্ডারিং আইন খুব কঠোর। একে কাজে লাগিয়ে পাচার করা টাকা ফেরানো সম্ভব। সূত্র জানায়, সুইস ব্যাংকসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধার কার্যক্রমের কৌশল নির্ধারণের জন্য গত বছরের নভেম্বরে একটি কমিটি গঠন করা হয়। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন কার্যক্রম প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্স ওই কমিটি গঠন করে।

এখন পর্যন্ত যেসব দেশ পাচার করা অর্থ উদ্ধার করেছে এবং কোন দেশ থেকে করেছে-সেগুলোর কৌশল সম্পর্কে জেনে বাংলাদেশের কোন সংস্থার কী দায়িত্ব, তা সুনির্দিষ্টভাবে নিরূপণ করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয় কমিটিকে। এজন্য কোন সংস্থা কীভাবে তথ্য আদান-প্রদানসহ কার্যকর উদোগ নেবে, এ বিষয়ে মতামত দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসানকে প্রধান করে ৫ সদস্যের এ কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন দুর্নীতি দমন কমশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের একজন করে প্রতিনিধি।

কমিটি প্রায় এক বছর বিভিন্ন দেশের আইনকানুন পর্যালোচনা করে গত নভেম্বরে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে মামলা, বিদ্যমান আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, তথ্য বিনিময়ের বিভিন্ন জটিলতা, বিভিন্ন দেশের আইনকানুন পর্যালোচনা, অর্থ উদ্ধারের একটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, সবার আগে পাচার করা অর্থ শনাক্ত করতে হবে। এজন্য দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সোর্স কাজে লাগাতে হবে। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য আর্থিক লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থের গন্তব্য সম্পর্কে নজর রাখতে হবে।

বিদেশি দূতাবাসগুলো যেসব বিষয়ে নজর রাখতে পারে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-কোনো বাংলাদেশি সংশ্লিষ্ট দেশে ব্যবসা বা বাড়ি কিনছেন কি না। এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোয় যোগাযোগ করলে সহজেই পাওয়া যাবে। এছাড়া কাস্টমসসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তথ্যবিনিময় করে পাচার করা অর্থ সম্পর্কে তথ্য পেতে পারে। এছাড়া বিএফআইইউ নিজস্ব উদ্যোগে পাচার করা অর্থ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পাচার করা অর্থের সন্ধান পাওয়ার পর সেগুলো উদ্ধারের জন্য প্রথমে দেশের আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। যে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ করে অর্থ পাচার করা হয়েছে তারা বা দুদক এই মামলা করতে পারে। এই মামলার পাশাপাশি যে দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে ওই দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে আদালতের রায় নিজেদের পক্ষে নিয়ে এলে তা দিয়ে ওই দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তথ্য পাওয়া সহজ হবে। একই সঙ্গে পাচার করা অর্থ ফেরানোও সহজ হবে। এক্ষেত্রে আইনি কাঠামো শক্তিশালী করতে হবে। যেসব দেশে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হয়, ওইসব দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে হবে।

এ বিষয়ে মানি লন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে বিএফআইইউ, কর ফাঁকির ক্ষেত্রে এনবিআর, দুর্নীতির ক্ষেত্রে দুদক, আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে কাস্টমস বিভাগ সংশ্লিষ্ট দেশের বিভাগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে পারে। এতে তথ্য পাওয়া সহজ হবে। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সহায়ক ভূমিকায় থাকতে হবে সব ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থাকে সেবা দেয়ার জন্য ওই মন্ত্রণালয়ে আলাদা একটি কাঠামো রাখা যেতে পারে। যাদের সঙ্গে পাচার করা অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো যোগাযোগ রাখবে। এ বিষয়ে বিএফআইইউর একজন কমকর্তা বলেন, আইনগতভাবে অর্থ পাচারবিষয়ক সব তথ্য বিএফআইইউকে দেশের সব সংস্থা দিতে বাধ্য।

কিন্তু নিজ উদ্যোগে ব্যাংক ছাড়া কেউ দেয় না। সব ব্যাংকও দেয় না। বিএফআইইউকে তদন্ত করে এগুলো বের করতে হয়। যে কারণে অনেক সময় লাগে। সবার সহযোগিতা থাকলে কাজটি আরও দ্রুত হতো। এখানে কাজের সমন্বয় বাড়াত হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোসহ আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া টাকা পাচারের আড়ালে কর ফাঁকির ঘটনা থাকলে তা কঠোরভাবে বিবেচনা করে। এজন্য ওইসব দেশে পাচার করা অর্থের বিষয়ে কর ফাঁকির ঘটনা প্রমাণ করতে পারলে সহজেই পাচারকারীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয় এবং আইনের আওতায় আনা যায়। এজন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের সক্ষমতা আরও বাড়াত হবে।

এই বিভাগের আরো খবর