শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পবিত্র মক্কার ইসলামি নিদর্শন!

বিশ্ব মুসলিমদের সবচেয়ে বড় সম্মেলন তথা মহাসম্মেলন হলো হজ। হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ। ধনবান মুসলমানের জীবনে একবার হজ করা ফরজ। হজ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন- ‘যেসব লোকের পথের সামর্থ্য আছে, তাদের ওপর আল্লাহর জন্য হজ পালন কর্তব্য।’

হজের সময় সারা বিশ্বের মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা গড়ে ওঠে। সবার কণ্ঠে একই আওয়াজ- ‘লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক’। মক্কায় রয়েছে বিভিন্ন ইসলামি নিদর্শন, যেগুলো সারা বিশ্বের মুসলমানদের আবেগ-অনুভূতির সাথে জড়িত। নিচে এসব ইসলামি নিদর্শনগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো : * কাবাঘর : কাবাঘর মক্কায় অবস্থিত মুসলমানদের প্রধান পবিত্র স্থান। আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষ পাঠানোর আগেই কাবাঘর তৈরি করেন। নূহ আ:-এর সময় সংঘটিত মহাপ্লাবনে কাবাঘরটি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরবর্তীকালে ইব্রাহিম আ: স্বীয়পুত্র ইসমাইল আ:কে সাথে নিয়ে পবিত্র কাবাঘরের সংস্কার করেন। এরপর বিভিন্ন সময় নবী-রাসূল, হজরত মুহাম্মদ সা:, সাহাবি, তাবে-তাবেইনসহ তুর্কি ও সৌদি বাদশাহরা কাবাঘরের সংস্কার ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন। হজের তিনটি ফরজের মধ্যে কাবাঘর সাতবার তাওয়াফ করা প্রধান ফরজ। এই কাবাঘরের দিকে মুখ করেই বিশ্বের সব মুসলমান নামাজ পড়েন।

* আরাফাত ময়দান :

মক্কার কাবাঘর থেকে আরাফাত ময়দান ১৬ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। হজের আরেকটি ফরজ হচ্ছে ৯ জিলহজ আরাফাত ময়দানে অবস্থান করা। রাসূলে মকবুল সা: আরাফাত ময়দানে অবস্থানকালে জোহর ও আসরের নামাজ একসাথে পড়েছিলেন, সেই স্থানে এখন মসজিদুন নামিরা অবস্থিত।

* সাফা ও মারওয়া :

সাফা ও মারওয়া পাহাড় দু’টি কাবাঘর থেকে পূর্ব দিকে সামান্য দূরে অবস্থিত। একটু দক্ষিণ-পূর্বে সাফা এবং উত্তর-পূর্বে মারওয়া। দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব প্রায় ২২৯ মিটার ও উচ্চতা ৫ মিটার। মহান আল্লাহ কুরআনে বলেন- ‘নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া পাহাড় দুটো আল্লাহর নিদর্শনস্বরূপ’। আল্লাহর নির্দেশে ইব্রাহিম আ: যখন বিবি হাজেরা ও শিশুপুত্র ইসমাইলকে মক্কার নির্জন প্রান্তরে রেখে আসেন, তখন পানির পিপাসায় ছটফট করা ইসমাইলের জন্য পানির সন্ধানে মা হাজেরা সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে সাতবার দৌড়াদৌড়ি করেন। পরে আল্লাহর আদেশে অলৌকিকভাবে জমজম কূপের সৃষ্টি হয়। সাফা পাহাড়ের কাছেই হজরত আরকাম রা:-এর বাসগৃহ ছিল। যেখান থেকে ইসলামের প্রাথমিক যুগে নবী মোস্তফা সা: ইসলামের দাওয়াত দিতেন। দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ফারুক রা: এই বাসগৃহে ইসলাম গ্রহণ করেন।

* মুজদালিফা :

হাজীরা মুজদালিফার ময়দানে মুক্ত আকাশের নিচে ১০ জিলহজ সারা রাত আল্লাহর স্মরণে কাটান। কাবাঘর থেকে ৯ কিলোমিটার পূর্বে এবং আরাফাত থেকে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে মুজদালিফা অবস্থিত। নবী করিম সা: এখানে মাগরিব ও এশার নামাজ একসাথে পড়েছিলেন। মিনায় শয়তানের উদ্দেশ্যে কঙ্কর নিক্ষেপের জন্য হাজীরা এখান থেকে কঙ্কর সংগ্রহ করেন।

* মিনা :

মিনা মক্কা মুওয়াজ্জমা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এখানে মসজিদুল খায়েফ, কঙ্কর নিক্ষেপের তিনটি স্থান এবং কোরবানি করার স্থান নির্দিষ্ট আছে। নবী করিম সা: এখানে বিদায় হজের ভাষণ দেন।

* হাজরে আসওয়াদ :

কাবাঘর তাওয়াফ করার সময় হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করতে হয়। কাবাঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ঘরের সাথে সংযুক্ত আছে এ কুদরতি পাথর। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত রাসূল সা: বলেছেন- ‘হাজরে আসওয়াদ যখন বেহেশত থেকে অবতীর্ণ হয়, তখন ওটা দুধের চেয়েও সাদা ছিল। পরে আদম সন্তানদের গুনাহ ওটাকে কালো করে দেয়।’ আদম আ: পৃথিবীতে আসার সময় পাথরটি নিয়ে আসেন।

* মাকামে ইব্রাহিম :

কাবাঘরের পূর্ব পাশের দরজার সামনে কাচ দ্বারা সুরক্ষিত ছোট ঘরটিই হলো মাকামে ইব্রাহিম। ঘরের ভেতর ইব্রাহিম আ:-এর পবিত্র পায়ের ছাপবিশিষ্ট পাথর রয়েছে। তিনি এ পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে কাবাঘরের সংস্কারকাজ করেছিলেন। এর ওপর দাঁড়ালে পাথর অলৌকিকভাবে প্রয়োজন অনুসারে উঁচু-নিচু হতো। এ পাথর কাবাঘর নির্মাণের সময় আল্লাহ তায়ালা বেহেশত থেকে প্রেরণ করেন।

* হাতিম :

শবে মেরাজের রাতে হাতিমে হুজুরে পাক সা:কে জিব্রাইল আ: বক্ষ বিদীর্ণ করে জমজমের পানি দিয়ে হৃৎপিণ্ড ধুয়ে দিয়েছিলেন। কাবাঘরের উত্তর পাশে একটু উঁচু স্থানে দেয়াল দিয়ে ঘেরা অংশই হাতিম।

* জমজম কূপ :

কাবাঘরের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সামান্য দূরে জমজম কুয়া অবস্থিত। এটি অলৌকিক কুয়া। কুয়াটি হাজরে আসওয়াদ থেকে ৫৪ ফুট দূরে অবস্থিত। কুয়াটির গভীরতা সমতল ভূমি থেকে ৪৬ ফুট, মুখের প্রশস্ততা ১৬ ফুট এবং ব্যাস ৫ ফুট। রাসূলে করিম সা: বলেছেন- ‘এ পানি শুধু পানীয় নয়; বরং খাদ্যের অংশ এবং এতে পুষ্টি আছে।’ এ পানি বিভিন্ন রোগ উপশমও করে। জমজমের পানি দ্বারা জিব্রাইল আ: নবীজী সা:-এর পবিত্র ক্বলব (বক্ষ বিদীর্ণ করার সময়) ধৌত করেন। * হেরা পাহাড় : হেরা পাহাড়ের গুহায় হজরত মুহাম্মদ সা: নবুওয়তপ্রাপ্ত হন, অর্থাৎ এখানেই প্রথম কুরআন নাজিল হয়। (সূরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত)। হজরত মুহাম্মদ সা: প্রায় তিন বছর এখানে ইবাদত করার পর নবুওয়ত লাভ করেন। মসজিদুল হারাম থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে হেরা পর্বত অবস্থিত। পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় দুই হাজার ফুট।

পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ২ কিলোমিটার আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে চূড়ায় উঠা যায়। পাহাড়ের শীর্ষ চূড়ায় হেরা গুহা অবস্থিত।

* নবীজী সা:

এর বাড়ি : পবিত্র কাবাঘর থেকে প্রায় ৪৪০ গজ পূর্বে হুজুরে পাক সা:-এর বাড়ি। এখানে হুজুর সা:-এর জন্ম হয়। এ বাড়িটি এখন পাঠাগার।

এই বিভাগের আরো খবর