মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে ফল ব্যবসায়ীকে সাজানো মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহী গোদাগাড়ীতে এক ফল ব্যবসায়ীকে মাদক মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে জেল হাজতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাজশাহী (গোয়েন্দা) শাখার কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত সদস্যেরা হচ্ছে এস আই দেলোয়ার ও এএস আই নাসির সহ আরো দুইজন নারী সদস্য। এ ঘটনায় গতকাল রবিবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাজশাহীর (গোয়েন্দা) শাখায় ভুক্তভোগী সাইদুর রহমান এর স্ত্রী মোসা: সুলতানা পারভিন অভিযুক্তদের নাম উল্লেখ করে বিচার চেয়ে একটি অভিযোগপত্রসহ কিছু রেকোর্ডের প্রমানাদী জমা দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৬/০৮/২০২০ ইং তারিখে সাইদুর রহমান নামের এক ফল ব্যবসায়ীকে ৬ বোতল ফেন্সিডিল সহ আটক করে আদালতে প্রেরন করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাজশাহী (গোয়েন্দা) শাখার একটি টিম । কিন্তু এ ঘটনাটিকে সাজানো নাটক বলছে আটক সাইদুর রহমানের স্ত্রী মোসা: সুলতানা পারভিন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত একমাস যাবত এস আই দেলোয়ার ও এ এস আই নাসির আমার স্বামীকে সোর্ষের কাজ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। এতে আমার স্বামী রাজি না হওয়ায় তাকে পরিকল্পিত ভাবে মাদক মামলা (ফিটিং) দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ২৪/০৮/২০২০ ইং তারিখে রাত ৯.৩৩ মিনিটে একজন মহিলা সদস্য পাঠায় আমার দোকানে মাদকদ্রব্য রেখে আমার স্বামীকে ধরানোর জন্য কিন্তু আমার দোকানে সিসিটিভি লাগানো দেখে ফেরত যায় সেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহিলা সদস্য যা সিসিটিভি ফুটেজ চেক করলে দেখা যাই। এর একদিন পরে ২৬/০৮/২০২০ ইং তারিখে আনুমানিক বিকাল ৬.১৫ মিনেটে আমার স্বামী দোকান থেকে বাসায় আসলে তারা ২জন মহিলা ও ৪ জন পুরুষ বাড়িতে এসে প্রবেশ করে জোরপূর্বক প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে কোনো সাক্ষীর উপস্থিতি ছাড়াই আমার বাসা তল্লাশি শুরু করে। এ সময় আমার স্বামীকে হাতকড়া লাগিয়ে শুরু করে মারধর । সেইসাথে ঘরের আলমারির ওয়ারড্রব ড্রেসিং টেবিল সহ যাবতীয় কিছু ভেঙে তছনছ করে দেই তারা। এর পরে একজন মহিলা ও একজন পুরুষ হাতে ব্যাগ নিয়ে ছাদে গিয়ে কিছুক্ষণ পরে ফিরে এসে বলে মাদক পাওয়া গেছে। তারপর আমার স্বামীকে নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় তিনজনকে ডেকে সাক্ষী করে যারা ঘটনার সময় উপস্থিত ছিল না। তারপর তাদের স্বাক্ষর ও ভিডিও ধারন করে তাদের বলে ঘরের ভেতরের সামসেটের ওপর থেকে মাদক দ্রব্য পাওয়া গেছে। এরপর আমার স্বামীকে তার জাতীয় পরিচয় পত্রসহ নিয়ে যাওয়া হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাজশাহীর (গোয়েন্দা) শাখা অফিসে। এর কিছুক্ষণ পরে ফোনে এস আই দেলোয়ার পরিচয় দিয়ে বলে, তোকে ও তোর ছেলেকে নিয়ে আসতে পারতাম কিন্তু নিয়ে আসলাম না যার বিনিময়ে তোরা আমাকে এক লক্ষ টাকা দিবি আর টাকা না দিলে তোকে ও তোর ছেলেকে উঠিয়ে নিয়ে আসবো। এত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা আমরা রাখিনা বললে দর কষাকষির মাধ্যমে ২৫০০০ টাকা আমাকে ও আমার ছেলেকে না ধরতে সহমত হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাজশাহীর (গোয়েন্দা) শাখার এস আই দেলোয়ার। গ্রামের আত্মীয় স্বজনদের কাছথেকে ধার নিয়ে টাকা দিতে দেরি হওয়ায় তারা পুনরায় আমাকে ভয় ভীতি দেখায় এবং আমি খুব ভীত হয়ে জানে বাঁচার তাগিদে খুব-কষ্ট করে তাদের ২৫০০০ হাজার টাকা দিই। টাকা নিয়ে তারা জানায় যে আমরা যতদিন আছি ততদিন ভালো থাকতে চাইলে লোক ধরিয়ে দিতে হবে না হলে তোকে ও তোর ছেলেকে উঠিয়ে নিয়ে যাব। এবং তোর স্বামীর ভোটার আইডি কার্ড থাকলো তাকে আরও মামলা দেবো। এই অবস্থায় আমরা উপায় না পেয়ে সকল ফোন রেকর্ড ভিডিও ছবি সহ সিডি আকারে সংযুক্ত করে পরিচালক মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছি। এই প্রতিবেদক এর হাতে আসা অডিও এবং ভিডিও ফুটেজ দেখলে যার সত্যতা মেলে। এমন একটি অডিও ক্লিপে শোনা যায় গিয়াস উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে ০১৩০৪৭১৩২৪ নাম্বার থেকে তার ছেলেকে বিভিন্ন রকম হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (গোয়েন্দা) শাখার বিভাগীয় প্রধান জানান, আমরা ভুক্তভোগী সাইদুর রহমানের স্ত্রী মোসা: সুলতানা পারভিনের একটি লিখিত অভিযোগ ও একটি সিডি পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরো খবর