রবিবার, ১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুমিনের জীবনে আশা ও ভয়

ডেস্ক নিউজ : ঈমানের গুরুত্ব : ঈমান শুধু শব্দ উচ্চারণের নাম নয়। ঈমান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যের শপথ। ঈমান পাঠের মাধ্যমে মুমিন তার জীবন ও মৃত্যুকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে এবং তার সর্বাত্মক আনুগত্যের প্রতিজ্ঞা করে। বিনিময়ে সে আল্লাহর কাছে পুরস্কার ও প্রতিদান আশা করে। একইভাবে মুমিন হৃদয় আল্লাহর অবাধ্যতার পরিণামে শাস্তির ভয় পায়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে শিরক করা, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যাওয়া।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস ১৯৭০১)

এখানে মূলত তিনটি বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে, এক. আল্লাহর শিরক না করা, দুই. আল্লাহর শাস্তিকে ভয় পাওয়া, তিন. আল্লাহর রহমতের আশা রাখা। এ জন্যই বলা হয় ‘ঈমান হলো ভয় ও আশার মধ্যবর্তী বিষয়।’ আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুমিন যদি আল্লাহর শাস্তি সম্পর্কে জানত তবে সে জান্নাতের আশা করত না আর অবিশ্বাসী যদি আল্লাহর রহমত সম্পর্কে জানত তবে সেও জান্নাত থেকে নিরাশ হতো না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭৫৫)

আশা ও ভয়ের সীমারেখা : আল্লাহ তাঁর রহমতের প্রতি যেমন মুমিনদের আশান্বিত হতে বলেছেন, তেমনি তাঁর পাকড়াওকে ভয় পেতে বলেছেন। প্রশ্ন হলো ভয় ও আশার সমন্বয় কিভাবে হবে? প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, ভয় ও আশার ক্ষেত্রে মুমিন হবে ভারসাম্যপূর্ণ। মুমিন যেমন আল্লাহর রহমতে আশান্বিত হয়ে তাঁর শাস্তির কথা ভুলে যাবে না, তেমন আল্লাহর শাস্তির ভয়ে তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ে যাবে না। এ জন্য আল্লাহ কোরআনের একাধিক আয়াতে শাস্তি ও পুরস্কারের কথা পাশাপাশি এনেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক দ্রুত প্রতিশোধ গ্রহণকারী, তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৬৭)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘পুণ্যবানরা থাকবে পরম স্বাচ্ছন্দ্যে এবং পাপাচারীরা থাকবে জাহান্নামে।’ (সুরা : ইনফিতার, আয়াত : ১৩-১৪)

আল্লাহর অনুগ্রহই বড় : সব গুণাবলির ক্ষেত্রে আল্লাহ স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পরিপূর্ণ। তবে আলেমরা বলেন, মুমিন সব সময় আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ লাভের প্রবল আকাঙ্ক্ষা পোষণ করবে। কেননা আল্লাহর রহমত তাঁর ক্রোধের চেয়ে প্রবল। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার দয়া—তা সব বস্তুতে ব্যাপ্ত। সুতরাং আমি তা তাদের জন্য নির্ধারিত করব, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, জাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনে বিশ্বাস করে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৫৬)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যখন সৃষ্টির কাজ শেষ করলেন, তখন তিনি তাঁর কিতাব লাওহে মাহফুজে লেখেন—যা আরশের ওপর তাঁর কাছে আছে। নিশ্চয়ই আমার রহমত আমার ক্রোধের ওপর প্রবল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১৯৪)

আশা ও ভয় শুধু পরকালের ব্যাপারে নয় :    মুমিন শুধু পরকালীন জীবনের ব্যাপারেই নয়; বরং পার্থিব জীবনের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির ব্যাপারেও সে ভয় ও আশা পোষণ করবে। কেননা পরকালীন কল্যাণ ও অকল্যাণ আল্লাহর হাতে। আল্লাহ বলেন—‘বলো, হে আল্লাহ! সব রাজ্যের মালিক! আপনি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন এবং যার থেকে ইচ্ছা রাজত্ব ছিনিয়ে নেন, যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন, আপনার হাতেই তো কল্যাণ, নিশ্চয়ই আপনি সর্বশক্তিমান।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ২৬-২৭)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘সেসব জনপদবাসী যদি ঈমান আনত এবং আল্লাহকে ভয় করত তাহলে আমি অবশ্যই তাদের জন্য আকাশ ও জমিনের সমূহ বরকত উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা অস্বীকার করেছে, তাই তাদের কৃতকর্মের কারণে আমি তাদের পাকড়াও করেছি।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৯৬-৯৯)

আল্লাহ সবাইকে যথাযথভাবে তাঁর ভয় ও তাঁর প্রতি আশা পোষণের তাওফিক দিন। আমিন।

এই বিভাগের আরো খবর