হজ একটি পবিত্র ইবাদতের নাম। আল্লাহপ্রেমের চূড়ান্ত উন্মাদনার প্রতিফলন ঘটে হজে। বান্দা যেমন আল্লাহর ভালোবাসায় আল্লাহর পবিত্র আঙিনায় মেহমান হিসেবে হাজির হয়, তেমনি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনও তার বান্দাকে ক্ষমা ও জান্নাতের পুরস্কারের মাধ্যমে সমাদর করেন।
বোখারি ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তুমি কোনো হাজীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তাকে সালাম দেবে, মুসাফাহ করবে এবং তার বাড়িতে প্রবেশের আগেই তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুরোধ করবে। কেননা তিনি ক্ষমাপ্রাপ্ত।’
মৃত্যু প্রত্যেকটি প্রাণীর ইহলৌকিক জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি। যেখানেই থাকুক না কেন, তাকে মৃত্যুকে বরণ করে নিতেই হবে। তা হজের সফরেও হতে পারে। এরই মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশিসহ অনেক হজপ্রত্যাশী ইন্তেকাল করেছেন। আসলে মৃত্যু কোনো হাজীর কাছেই অপ্রত্যাশিত নয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজীরা সাধারণত সব ধরনের দেনাপাওনা পরিশোধ করেই হজের সফরের জন্য বের হন।
কাফনের কাপরের মতো ইহরামের সাদা কাপড়ও যেন মৃত্যুর প্রস্তুতির কথাই মনে করিয়ে দেয়। মক্কা অথবা মদিনায় মৃত্যুবরণ করা হাজীদের কাছে বরাবরই মর্যাদার বিষয় হিসেবে বিবেচিত। সব ধরনের শিরক থেকে মুক্ত নেককার কোনো বান্দা যদি পবিত্র দুই নগরীর (মক্কা ও মাদিনা) কোনো একটিতে মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে তা হবে অতিরিক্ত মর্যাদার বিষয়। তিনি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবেন। তার হাশর হবে জান্নাতি মানুষ হিসেবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মক্কা অথবা মদিনায় মৃত্যুবরণ করে, সে (জাহান্নাম থেকে) মুক্তি লাভ করে হাশরের ময়দানে উঠবে।’
(বায়হাকি, শুয়াবুল ইমান : ৩/৪৯০)।
একজন মানুষ হজ থেকে ফিরে এলে যেমন নিষ্পাপ হয়ে ফিরেন, তেমনি হজে গিয়ে মৃত্যুবরণ করলেও তা সৌভাগ্যের মৃত্যু। সৌভাগ্যের দরজাগুলো খুলে যায় হাজীর জন্য। এমনকি সেই মৃত্যু যদি কোনো দুর্ঘটনামুক্ত স্বাভাবিক মৃত্যু হয়, তবুও হজের সফরের সেই মৃত্যু ফজিলতের। হজের আজন্ম স্বপ্ন পূরণের আবেগঘন সেই মুহূর্তেই যদি কারও কাছে মৃত্যুর অবধারিত পরিণতি হজির হয়ে যায়, তাহলে তিনি হজ না করেও এর সওয়াব পেতে থাকবেন অনবরত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশে বের হলো, অতঃপর সে মারা গেল, তার জন্য কেয়ামত পর্যন্ত হজের নেকি লেখা হতে থাকবে।’ (সহিহুত তারগিব ওয়াত তারহিব : ১১১৪)।
আর সেই মৃত্যু কোনো দুর্ঘটনার কারণে হলে তো কোনো কথাই নেই। হজের সফরে কোনো দুর্ঘটনার করণে মৃত্যু হলে সেই হাজী তালবিয়া (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক …) পাঠরত অবস্থায় হাশরের ময়দানে উত্থিত হবে। জনৈক মুহরিম (হজের এহরামরত) ব্যক্তিকে তার সওয়ারি ভূপাতিত করলে তার মৃত্যু হয়। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘তোমরা তাকে বরই পাতার পানি দ্বারা গোসল দাও এবং তার দুইটি কাপড়েই তাকে কাফন পরাও। তার মাথা ও চেহারা ঢাকবে না। কেননা, সে কেয়ামত দিবসে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উত্থিত হবে।’
(আবু দাউদ : ৩/২১৩)।
কখনও কখনও হজের সফরের মৃত্যু সরাসরি শহীদি মৃত্যুতে পরিণত হয়। ক্রেন ধস অথবা অগ্নিকা-ের মতো কোনো দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে তা শহীদি মৃত্যু বলে গণ্য হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর পথে নিহত হওয়া ছাড়াও সাত ধরনের শহীদ রয়েছে।
১. মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি|
২. পানিতে নিমজ্জিত ব্যক্তি|
৩. শয্যাশায়ী অবস্থায় নিহত ব্যক্তি|
৪. পেটের রোগে মৃত্যুবরণকারী|
৫. অগ্নিদগ্ধ ব্যক্তি|
৬. যে ব্যক্তি ধ্বংসাবশেষের নিচে পড়ে মারা যায়|
৭. সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মারা যাওয়া নারী।
(আবু দাউদ : ৩/১৫৬)।