আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভিন্ন ধর্মে বিয়ে রুখতে ধর্মান্তরণ প্রতিরোধী আইন নিয়ে বর্তমান ভারতে যা হচ্ছে, তাকে এক হাত নিলেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।
স্থানীয় সময় সোমবার (২৮ ডিসেম্বর ) যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন থেকে একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারের উদ্বৃতি দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদপত্র আনন্দবাজার।
সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য বলেন, ‘এটা খুবই চিন্তার বিষয়। একে মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে। জীবনযাপনের অধিকার তো মৌলিক অধিকার হিসেব স্বীকৃত। কিন্তু এই আইনের ফলে মানবাধিকার লঙ্খন করা হচ্ছে। কারণ যে কোনও মানুষই নিজের ধর্ম বদলে অন্য ধর্মগ্রহণ করতে পারেন। সেটা সংবিধান স্বীকৃত। তাই এই আইন অসাংবিধানিক।’
‘লাভ জিহাদ’-এর অজুহাতে একের পর এক বিজেপিশাসিত রাজ্য যখন বিয়ের নামে ধর্মান্তরণ প্রতিরোধী আইন কার্যকর করতে উঠেপড়ে লেগেছে, সেই সময় অমর্ত্য সেনের মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেও আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়।
ঘটনাচক্রে সোমবারই ভিন্নধর্মী এক দম্পতিকে নিয়ে মামলার শুনানিতে রায় দিতে গিয়ে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট বলেছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক তরুণী যদি স্বামীর সঙ্গে থাকতে চান, নিজের ইচ্ছায় জীবন কাটাতে চান, সেই স্বাধীনতা রয়েছে তার।
অমর্ত্য সেন বলেন, ‘অবিলম্বে এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চাওয়া উচিত। এই আাইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা উচিত। এটা খুবই বড় বিষয়। ভারতের ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত নেই। আকবরের সময় নিয়ম হয়েছিল, যে কোনও ব্যক্তি যে কোনও ধর্ম গ্রহণ করতে পারেন। এবং যে কোনও ধর্মে বিবাহ করতে পারেন। ফলে আমাদের দেশে সেই সংস্কৃতি রয়েছে। আমাদের সংবিধানে ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষার কথা খুব স্পষ্টভাবে বলা আছে। ফলে এমন আইন সংবিধানকেই অপমান করে।’
তিনি বলেন, ‘এখন ‘ক্রিমিনাল অ্যাক্ট অব লভ জিহাদ’ বলা হচ্ছে। গভীরভাবে ভাবলে দেখলে বোঝা যায় ‘লাভ’ বা প্রেমের মধ্যে কোনও ‘জিহাদ’ নেই। ভিন্ন ধর্মের কাউকে ভালবেসে বিয়ে করলে, তার মধ্যে কোনও ‘জিহাদ’ থাকতে পারে না। তেমনই একটি ধর্ম ছেড়ে অন্য কোনও ধর্ম গ্রহণ করলেও কোনও সমস্যা নেই। এটা একটা রাজনৈতিক দল করছে। এর ফলে ভারতকে অপমান করা হচ্ছে। এটা ভারতের সংস্কৃতি নয়। আমার বিশ্বাস, আদালত এর জবাব দেবে।’