রহিদুল ইসলাম রাইপ নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার মহাদেবপুর কৃষি ও কারিগরি কলেজের ম্যানেজিং কমিটির গঠন নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। গত বছর কলেজটির ভূমিদাতা সদস্য ও প্রতিষ্ঠাতাকে ম্যানেজিং কমিটিতে না রেখে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কারিগরি বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে বিধি বহির্ভুতভাবে নতুন কমিটি গঠন করেন।
এ বিষয়ে কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক ও অধ্যক্ষ অরুণ কুমার বলেন এসব অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সম্প্রতি কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
এছাড়া কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে বিধি অনুযায়ী নিয়োগ পাওয়া কলেজটির দুই প্রশিক্ষক ও এক অফিস সহকারীকে বাদ দিয়ে নতুন শিক্ষক-কর্মচারীদের কাগজপত্র এমপিওভুক্তির জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা দেন। এ বিষয়ে এমপিও বঞ্চিত ওই তিন শিক্ষক-কর্মচারী গত ১৫ জুন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মহাদেবপুর ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে ২০০৩-২০০৪ অর্থবছরে কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন ৩৯ শতাংশ জমি ও এসআরও নং ৫৩/আইন/৯৬ মোতাবেক ১ লাখ ৭ হাজার টাকা দিয়ে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হন তিনি। এছাড়া তাঁর বাবা ধীরেন্দ্রনাথ ম-ল প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯৭ শতাংশ জমিদানের মাধ্যমে কলেজের আজীবন দাতা সদস্য হন। এছাড়া রেজিস্ট্রি করার সময় আমার বাবার নামে থাকা আরও ৬৬ শতাংশ জমি ভুল করে রেজিস্ট্রি হয়ে যায়। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ/পরিচালকের দায়িত্বে থেকে একক প্রচেষ্টায় কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু পরবর্তীতে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সাবেক এক সেনাকর্মকর্তা ও বিএনপির সাবেক সাংসদ আখতার হামিদ সিদ্দিকী কলেজে বিবাদ সৃষ্টি করে কৌশলে অরুণ কুমারকে অধ্যক্ষের পদ থেকে সরিয়ে দেন এবং কলেজের কৃষি ডিপ্লোমা শাখার জনবল কাঠামোতে জীববিজ্ঞান বিষয়ে কোনো পদ না থাকলেও জীববিজ্ঞান বিষয়ে পাস করা বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ময়নুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেন তৎকালীন পরিচালনা কমিটি। গত বছরের (২০১৯) মাঝামাঝি সময়ে কলেজে নতুন ম্যানেজিং কমিটি গঠিত হয় ওই কমিটিতে দাতা সদস্য ও প্রতিষ্ঠাতাকে বাদ দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। যা সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভুত। এই কমিটি বাতিল চেয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নওগাঁ আদালতে মামলা করেন অরুণকুমার ম-ল। এছাড়া কলেজে জমিদাতা অরুণ কুমারের বাবা ধীরেন্দ্রনাথ দান-কবলা জমির দলিল রদ চেয়ে গত বছরের ৭ অক্টোবর আদালতে মামলা করেন। বর্তমানে মামলা দুটি চলমান রয়েছে। কলেজের কমিটি ও জমি নিয়ে মামলা থাকা সত্ত্বেও রহস্যজনক কারণে গত বছরের ২২ অক্টোবর দেশের আরও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মহাদেবপুর কৃষি ও কারিগরি কলেজটি এমপিওভুক্তির তালিকায় নাম আসে। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয় অভিযোগপত্রে।
এমপিও বঞ্চিত ওই তিন শিক্ষক-কর্মচারীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মহাদেবপুর কৃষি ও কারিগরি কলেজটি গত বছরের অক্টোবর মাসে এমপিওভুক্ত হওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ময়নুল ইসলাম গোপনে তাঁদের তিনজনকে বাদ দিয়ে নতুন কাগজপত্র তৈরি করে টাকার বিনিময়ে নতুন শিক্ষক-কর্মচারীদের কাগজপত্র এমপিওভুক্তির জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠায়। অথচ বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ময়নুল ইসলামের নিয়োগের কোনো বৈধতা নেই। কলেজে জীববিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের কোনো পদ কৃষি ডিপ্লোমা শাখার জনবল কাঠামোয় নেই। তারপরেও তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং তিনি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দ্বায়িত্বে রয়েছেন।
কলেজের অধ্যক্ষ ময়নুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। কলেজের জন্য আমি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা প্রশাসনের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা এবং শিক্ষা কর্মকর্তারা অবহিত রয়েছেন। কোনো অনিয়ম করে থাকলে তা অবশ্যই তখন ধরা পড়তো। কলেজের ম্যানেজিং কমিটিতে পদ না পাওয়ায় কলেজ ও আমার স্বার্থ ক্ষুন্ন করার জন্য অরুণকুমার ম-ল এসব অভিযোগ করাচ্ছেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোবারুল ইসলাম বলেন, কলেজটির কমিটি গঠন ও জমি নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে এই মুহূর্তে কিছু বলা ঠিক হবে না। বিষয়টি আদালতেও মিমাংসা হবে। তবে ওই কলেজের তিন শিক্ষক-কর্মচারীর কাগজপত্র এমপিওভুক্তির কেন পাঠানো হয়নি তা তদন্ত করে দেখা হবে। এখানে কারও প্রতি কেউ অনিয়ম করে থাকলে তদন্ত করে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।