আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শেষ পর্যন্ত ৩২টি দেশের ২৩৯ বিজ্ঞানীর মতামত উপেক্ষা করতে পারল না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি স্বীকার করল, বাতাসে অতি ক্ষুদ্র কণার মাধ্যমে নভেল করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে, এমন প্রমাণ সামনে উঠে এসেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, মানুষের ভিড়ের মধ্যে, আবদ্ধ স্থানে কিংবা বায়ু চলাচলের সুব্যবস্থা নেই, এমন অবস্থায় বাতাসের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
যদি এমন আশঙ্কার পক্ষে নিশ্চিত প্রমাণ মেলে, তাহলে ঘরোয়া পরিবেশে বা আবদ্ধ স্থানে করোনাবিষয়ক নির্দেশিকায় পরিবর্তন আসতে পারে।
করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত কি না, তা নিয়ে বিতর্ক জন্ম নিয়েছিল মহামারির শুরু থেকেই। পেছনে পড়ে যাওয়া সে বিতর্ক আবারও সামনে টেনে এনেছেন একদল গবেষক। তাঁদের দাবি, বাতাসে ক্ষুদ্র কণার মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ যুক্তিতে ভর করে কোভিড-১৯ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে নির্দেশিকা রয়েছে, তা পরিবর্তনের দাবি তুলেছে বিজ্ঞানীদের দলটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে করোনাকে ‘বায়ুবাহিত’ রোগ বলতে নারাজ, এক খোলা চিঠিতে বিষয়টির সমালোচনা করেছেন দুই শতাধিক বিজ্ঞানী।
ডব্লিউএইচও এত দিন বলে এসেছে, মানুষ কাশি বা হাঁচি দিলে ড্রপলেটের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।
কিন্তু সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী যুক্তি দেখান, কোভিড-১৯ রোগীর হাঁচি বা কাশির সঙ্গে বড় অথবা ছোট ড্রপলেট তীব্র গতিতে বাতাসে মিশে যায়। সেগুলো বাতাসে ভর দিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত যেতে পারে। বাতাসে মিশে থাকা ওই ড্রপলেট শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে গেলে কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন বলেই মনে করছেন ওই গবেষকরা। এমন যুক্তি তুলে ধরে ডব্লিউএইচওকে একটি খোলা চিঠিও পাঠিয়েছেন তাঁরা। ওই বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রটি আগামী সপ্তাহে প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে ওই গবেষকদের বক্তব্য। আর তাতেই করোনা বায়ুবাহিত কি না, তা নিয়ে পুরোনো বিতর্কটা আবার সামনে চলে আসে।
কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ হোসে জিমেনেজ ডব্লিউএইচওর কাছে পাঠানো খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করাদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমরা চেয়েছি, করোনা যে বায়ুবাহিত, সে বিষয়টির পক্ষে যে প্রমাণ রয়েছে, তা ডব্লিউএইচও স্বীকার করুক।’
হোসে জিমেনেজ আরো বলেন. ‘এটা ডব্লিউএইচওর প্রতি আক্রমণ নয়; বরং একে বৈজ্ঞানিক বিতর্ক বলতে পারেন। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে বারবার প্রমাণ উপস্থাপন করা হলেও তারা তা আমলে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। অনন্যোপায় হয়ে বিষয়টি জনসমক্ষে আনতে হয়েছে আমাদের।’
এদিকে, বিজ্ঞানীদের দাবি অবশেষে আমলে নিলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, করোনা বায়ুবাহিত কি না, সে বিষয়ে উপস্থাপিত প্রমাণ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে আরো পর্যালোচনা প্রয়োজন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা বেনেডেট্টা অ্যালেগ্রানজি বলেছেন, ‘মানুষের ভিড়ের মধ্যে, আবদ্ধ স্থানে কিংবা বায়ু চলাচলের সুব্যবস্থা নেই, এমন অবস্থায় বাতাসের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কথা বলা হচ্ছে। সে আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এত দিন বলে এসেছে, কোভিড-১৯ মানুষের হাঁচি বা কাশি থেকে ড্রপলেটের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। কিন্তু এসব ড্রপলেট বাতাসে ভেসে থাকতে পারে না, তাই নিচে পড়ে যায়। যে কারণে করোনা প্রতিরোধে হাত জীবাণুমুক্তকরণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
কিন্তু ৩২টি দেশের ২৩৯ বিজ্ঞানী বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁরা বলছেন, এমন শক্তিশালী প্রমাণ রয়েছে যে, করোনাভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। তাঁদের দাবি, মানুষ যখন কথা বলে কিংবা নিশ্বাস ছাড়ে, তখন কয়েক ঘণ্টা অতি ক্ষুদ্র কণার মাধ্যমে ভাইরাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকার করেছে, কিছু সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে যেমন, আবদ্ধ স্থানে ও ভিড়ের মধ্যে এভাবে করোনা ছড়াতে পারে।