ডেস্ক নিউজ : করোনাভাইরাস মহামারি শেষ হতে আরো বহু সময় বাকি। কখন শেষ হবে সেটাও কেউ বলতে পারে না। কোনো কোনো দেশে এখনও প্রচুর সংখ্যক মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। যেসব দেশ ভাইরাসটিকে ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে, তাদের মধ্যেও সংক্রমণ দ্বিতীয় দফায় ফিরে আসা নিয়ে ভীতি রয়েছে। একে বলা হচ্ছে সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার সেকেন্ড ওয়েভ আসলে দেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে। তাই বর্তমান অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলায় আগে থেকেই আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে। এমনকি করোনাকে স্বভাবিক রোগ হিসেবে নিয়ে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে।
শনিবার (২২ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরাম আয়োজিত ‘কোভিড-১৯: দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় বাংলাদেশ কি প্রস্তুত’ শীর্ষক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এসব মতামত তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক পরামর্শক ডা. এম মুজাহেরুল হক বলেন, দেশের ২২টি জেলায় এখনও করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর টেস্ট ল্যাব নেই এবং সেটা থাকলে টেস্ট করোনা সহজ হতো। কিন্তু সারাদেশে যে কয়েকটা আছে, তার ওপর ফি ধরে দেওয়া হয়েছে, যাতে জনগণ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। যার কারনে ‘ডিজিজ কার্ভ স্লোলি রাইজিং, ডেথ কার্ভ রাইজিং’।
তিনি বলেন, শুরু থেকে আমরা বিভিন্ন মুখ থেকে শুনলাম বাংলাদেশ প্রস্তুত অথচ দীর্ঘদিন পর্যন্ত একটি প্রতিষ্ঠানে পিসিআর মেশিনে টেস্টের সুযোগ ছিল। আবার কতগুলো পিসিআর মেশিন ব্যবহারযোগ্য সেটা পর্যন্ত জানা ছিল না। করোনা মোকাবিলায় দায়িত্বশীলদের সমন্বয়হীনতা সবার নজরে পড়েছে।
‘ফার্স্ট ওয়েভ’ আমাদের চলছে, কতদিন চলবে জানা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা উচিত এবং জনগণকে যেভাবে মানানো উচিত সেই সমন্বয় হচ্ছে না। বাংলাদেশের মানুষ সচেতন কিন্তু মোটিভেটেডে না। তারা জানে মাস্ক না পরলে সমস্যা হবে কিন্তু তারা পরছে না। আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণকে বাধ্য করার চেষ্টা তাতেও সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ প্রথম ওয়েভ নিয়ন্ত্রণ করার কাছাকাছিও নেই। যদি ধরে নিই, বাংলাদেশ সামনে প্রথম ওয়েভ নিয়ন্ত্রণ করবে। তাহলে দ্বিতীয় ওয়েভ এলে তিনটি সমস্যা দেখছি। ব্যবসায়ী, পোশাক ও পরিবহন সংগঠন নেতাদের কাছ থেকে বাধা আসবে। দীর্ঘ দিন তারা নানা বিধিনিষেধ মেনে চলেছে। সীমিত আকারে কিছু বিধিনিষেধ এখনো আছে। বহু লোক চাকরিচ্যুত হলো, ফল পেল কী? পরে গিয়ে আবারো একই ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করতে গেলে স্বাভাবিক কারণেই বাধা আসবে।
আবার স্বাস্থ্যকর্মীদের চরমভাবে ডিমোটিভেট করা হয়েছে, তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে এবং হোটেল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, তাই তাদের রেসপন্স কেমন হবে বলা মুশকিল মন্তব্য করে অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে করোনা হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ এলে সেগুলো আবার ফাংশনাল করা কঠিন হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নানা বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তার ফলে একটি করে সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। আর সেগুলো করোনা মোকাবিলায় ক্ষতিকর হয়েছে। মন্ত্রী যখন একটা কথা বলেন, তখন আমরা ধরে নিতে পারি এটি স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বোচ্চ কথা। আমরা ধরে নিতে পারি, তার বক্তব্যে মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের সমর্থন আছে। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী যেভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এই ধারা চলতে থাকলে সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না।
এদিকে, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরামর্শক ডা. মো. মুশতাক হোসেন বলেন, দেশে করোনা মোকাবিলোতে পরিকল্পনা হয়েছে একটা কিন্তু কাজ হয়েছে আরেকটা। পরিকল্পনা ছিল যখন মহামারির চতুর্থ স্তরে যাব, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হবে তখন সোস্যাল ডিসটেন্সিং করা হবে। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে সব কিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত ব্রিফিং বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিং হলেও সাংবাদিকদের প্রশ্নত্তোর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সপ্তাহে অন্তত দুবার প্রশ্নত্তোর পর্ব থাকা উচিত, এতে করে জনগণের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব হয়, জবাবদিহিতাও হয়।
আবার যারা কাজ করেছেন জানুয়ারি থেকে তাদের পরিশ্রম ম্লান হয়েছে জেকেজি ও রিজেন্টের দুর্নীতির কারণে। তবে দুর্নীতিই একমাত্র সমস্যা না। লোক বদল হয়েছেন কিন্তু সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করা হয়নি— বলেন ডা. মুশতাক হোসেন।
ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরাম নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক এই আয়োজন করে আসছে।