ভারতের কেরালা রাজ্যে একজন হিন্দু নারীকে তথাকথিত ‘লাভ জিহাদে’র মাধ্যমে ধর্মান্তরিত করিয়ে মুসলিম যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়েছে কি না, দেশের সুপ্রিম কোর্ট বুধবার তা তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছে। এর আগে কেরালা হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল ওই ধর্মান্তর অবৈধ, কারণ তা করা হয়েছে ‘লাভ জিহাদে’র মাধ্যমে। এখন সুপ্রিম কোর্ট দেশের জাতীয় তদন্ত সংস্থা বা এনআইএ-কে (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি) বিষয়টি তদন্ত করতে বলেছে।
এনআইএ অবশ্য ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে জানিয়েছে, লাভ জিহাদের ঘটনা সত্যিই ঘটছে বলে তারা মনে করে। ‘সুপরিকল্পিতভাবে হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তরিত করিয়ে তাদের মুসলিম পুরুষদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে’, এনআইএ-র কৌঁসুলি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে জানিয়েছেন। এর আগে ভারতে আরএসএস বা তাদের সহযোগী বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছিল দেশের নানা প্রান্তে মুসলিম যুবকরা প্রেমের ফাঁদ পেতে দলে দলে হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তরিত করাচ্ছে।
এই তথাকথিত অভিযানকেই তারা নাম দেয় ‘লাভ জিহাদ’। এখন জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থা যে এনআইএ, তারাও কার্যত মেনে নিল যে এই অভিযোগ সত্যি। তবে সুপ্রিম কোর্ট এদিন বলেছে, কেরালার যে ঘটনাটিতে এনআইএ-কে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে হবে, তার পুরো প্রক্রিয়াটি তদারকি করবেন সর্বোচ্চ আদালতের সাবেক একজন বিচারপতি আর ভি রবীন্দ্রন।
কেরালার বাসিন্দা শাফিন জাহানের করা এক মামলাতেই সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছে। শাফিন জাহান গত বছরের ডিসেম্বরে এক হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করেন, কিন্তু কেরালা হাইকোর্ট সেই বিয়ে খারিজ করে দেয়। হাইকোর্টের যুক্তি ছিল, আপাতদৃষ্টিতে ওই মেয়েটিকে মগজধোলাই করিয়ে মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে – এবং এই ঘটনা ভারতে নারী স্বাধীনতার জন্য চরম অপমান।
ওই মেয়েটির বাবা অশোকন কে এম-ও অভিযোগ করেন, হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তরিত করিয়ে ইসলামি মৌলবাদে দীক্ষিত করার জন্য ‘খুব মসৃণ ও সুপরিকল্পিত একটা পদ্ধতি’ কাজ করছে। এদিকে হায়দ্রাবাদের এমপি ও ভারতীয় মুসলিম সমাজের অন্যতম প্রধান নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এনআইকে দিয়ে তথাকথিত লাভ জিহাদের ঘটনার তদন্ত করানোর নির্দেশের কড়া সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলছেন, ‘এনআইএ কেন এর তদন্ত করবে? তাহলে তো লাভ জিহাদকে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু হিসেবে ঘোষণা করতে হয়! সংবিধান মেনে কেউ ধর্মান্তরিত হলে সেটাকে কীভাবে আপনি লাভ জিহাদ বলতে পারেন?
ভারতে ধর্মান্তরণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয় – তবে প্রলোভন দেখিয়ে বা বিভ্রান্ত করে কাউকে ধর্মান্তরিত করা হলে তা আইনি বৈধতা পায় না।’
-বিবিসির