নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, বিআইডবি¬উটিএ’র অভিযানে ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সারাদেশে ২৬ হাজার ১৮১টি ছোট বড় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং প্রায় ১,১৬০.৬২ একর নদীর তীর ভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আজ সংসদে টেবিলে উপস্থাপিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য খসরু চৌধুরীর এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে একথা জানান।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন সময়ে নদী দখলের অপতৎপরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বিআইডবি¬উটিএ বিভিন্ন সময় ঘোষিত নদীবন্দর সীমানার মধ্যে এবং ক্ষেত্র বিশেষে অন্যান্য নদীর তীরভূমির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয়। ২০১০-২০২৪ সাল পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশে ২৬ হাজার ১৮১টি ছোট বড় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং প্রায় ১,১৬০.৬২ একর নদীর তীরভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। উচ্ছেদ কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রায় শতভাগ অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা হয়েছে এবং এখনও বিআইডবি¬উটিএ কর্তৃক নিয়মিতভাবে এর কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য, এই কার্যক্রম ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই বেগবান হয়। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বিআইডবি¬উটিএ যথাক্রমে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী ও বালুনদীর তীরভূমিতে বিদ্যমান অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দুইপাশ অবৈধ দখল মুক্ত রাখার লক্ষ্যে তীরভূমিতে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ চলমান রাখা এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণের পাশাপাশি তীরবর্তী জায়গায় জনগণের জন্য বসার বেঞ্চ, পরিবেশবান্ধব ইকোপার্ক, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বৃত্তাকার ১১০ কিলোমিটার নৌপথের সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, উচ্ছেদকৃত নদী এবং তীরভূমিতে যাতে পুনরায় অবৈধ দখল না হয় সেলক্ষ্যে ‘বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষংগিক অবকাঠামো নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে ৭ হাজার ৫৬২টি সীমানা পিলার স্থাপন, ৪৬ হাজার বৃক্ষরোপণ, ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, ১৪টি জেটি, কি-ওয়াল এবং ৩টি ইকোপার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। পর্যায়ক্রমে আরও উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত রয়েছে। নদী দূষণ রোধকল্পে ড্রেজিং বিভাগ কর্তৃক বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ নদী থেকে বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে এবং নদীগুলোর নাব্যতা রক্ষায় প্রতিবছর সংরক্ষণ ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঢাকার চারদিকে পণ্যবাহী নৌযানের মাধ্যমে ইট, বালি, সিমেন্ট, পাথর এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পরিবাহিত হচ্ছে। চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ঢাকার চারপাশে নদীকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার চারপাশের বৃত্তাকার নৌপথ বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, ধলেশ্বরী এবং শীতলক্ষ্যা নামক পাঁচটি নদী দ্বারা বেষ্টিত বৃত্তাকার নৌপথের মোট দৈর্ঘ্য ১১০ কিলোমিটার। অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য উক্ত নদীগুলোর তীরে সরকার ঘোষিত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গি ও মিরকাদিম-এ ৪টি অভ্যন্তরীণ নদী বন্দর রয়েছে। বিআইডবি¬উটিএ পরিচালিত এসকল অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরগুলো নির্বিঘেœ মালামাল ও যাত্রীবাহী নৌ চলাচলের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ করছে। নদীগুলোকে পুনরুদ্ধারের জন্য বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে একটি সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক নদীগুলো পুনরুদ্ধারে সকল অংশিদারদের নিয়ে সম্মিলিত একটি আম্ব্রেলা ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউআইপি) প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবটি বাস্তবায়নে জাতীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং কাজ চলছে। উক্ত ইউআইপি বাস্তবায়ন হলে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো সম্পূর্ণরূপে দূষণমুক্ত হবে এবং পরিবেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে।