ডেস্ক নিউজ : জরুরি অবস্থা বলে একটা কথা আছে। সুতরাং একান্ত অপারগতাবশত সিজার করতে কোনো সমস্যা নেই। অর্থাৎ যখন বাচ্চা বা মায়ের জীবননাশের বা বড় কোনো ক্ষতির আশঙ্কা হয় এবং কোনো বিজ্ঞ চিকিৎসক সিজার করাতে বলেন, তখন সিজার করানো যাবে। তবে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হলে সিজার করা জায়েজ নেই। কোনো চিকিৎসক বা প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বার্থে সিজার করাতে বাধ্য করলে তারা অবশ্যই গুনাহগার হবেন। দুনিয়াবি দিক থেকেও এটা মারাত্মক অপরাধ।
আর কেউ বিশেষ কোনো সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও নিছক প্রসব বেদনা থেকে বাঁচতে স্বেচ্ছায় সিজার করাতে চাইলে তাও জায়েজ হবে না। কেননা সিজারের মধ্যে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বেশ কিছু নিষিদ্ধ দিক রয়েছে। যেমন—
১. সিজারের দ্বারা নিজ শরীরের ক্ষতি করা হয়, যা ইসলামে নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৫)
যাঁরা সিজার করেছেন তাঁরা এ বিষয়ে অবগত আছেন। সারা জীবন এর কষ্ট বয়ে বেড়াতে হয়। এ ছাড়া ভারী কোনো কাজ করা যায় না। তিনটি সিজারিয়ান অপারেশনের পর পরবর্তী জীবনে কখনো পেটে অপারেশনের প্রয়োজন হলে জীবনের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়।
নবজাতক ও মাতৃস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চিকিৎসাশাস্ত্রের বিবেচনায় প্রয়োজন নেই—এমন ক্ষেত্রে সিজার করা হলে মায়ের প্রসব-পরবর্তী সংক্রমণ বাড়ে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। অঙ্গহানিও হতে পারে। শুধু তাই নয়, অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান ডেলিভারি সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রেও একটি বড় প্রতিবন্ধকতা।
২. অধিক সন্তান ধারণের দিক থেকে অনেকটা পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়। কেননা সিজার করলে দুই-তিনটির বেশি সন্তান নেওয়া যায় না। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ভালোবাসাপ্রবণ ও অধিক সন্তান জন্মদানে সক্ষম নারীকে বিবাহ করো। আমি কিয়ামতের দিন উম্মতের আধিক্য নিয়ে গর্ব করব।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২০৫০)
৩. বিনা প্রয়োজনে কোনো পুরুষকে সতর দেখানো হয়। কোনো পুরুষ চিকিৎসক অপারেশন করলে তো বিষয়টি স্পষ্ট। আর মূল অপারেশন কোনো নারী চিকিৎসক করলেও সাধারণত অ্যানেসথেসিয়া (অবশকরণ) বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ চিকিৎসকই করেন।
৪. অর্থের অপচয় হয়। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের সঙ্গে কুফুরি করেছিল।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬-২৭)
৫. সর্বোপরি সিজারিয়ানের মাধ্যমে মুসলিম দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে কাফিরদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা হয়।
খুবই আশ্চর্য লাগে যখন দেখি, বিশ্বের উন্নত কোনো দেশ এ পন্থা অবলম্বন করে না, অথচ আমাদের দেশে এটাই যেন সন্তান জন্ম দেওয়ার একমাত্র পদ্ধতি!
জরায়ু অপসারণ করা যাবে?
জরায়ু স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের একটি অন্যতম প্রধান অঙ্গ। এটি মানুষসহ বেশির ভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রধান প্রজনন অঙ্গ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই তোমাদের মায়ের পেটে যেভাবে ইচ্ছা আকৃতি দেন, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ নেই, তিনি মহাশক্তিমান ও প্রজ্ঞাশীল।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৬)
শুধু তা-ই নয়, এটি একটি হরমোন প্রতিক্রিয়াশীল অঙ্গ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হরমোন ক্ষরণের দ্বারা এর কার্যপ্রণালী নিয়ন্ত্রিত হয়। গর্ভধারণকালে ফিটাস জরায়ুর অভ্যন্তরে বড় ও বিকশিত হয়। বিষয়টি পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ আমাদের জানিয়েছেন ১৫০০ বছর আগে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ জানেন যা প্রতিটি নারী গর্ভে ধারণ করে এবং গর্ভাশয়ে যা কমে ও বাড়ে। আর তাঁর কাছে প্রতিটি বস্তু নির্দিষ্ট পরিমাণে রয়েছে।’ (সুরা রাদ, আয়াত : ৮)
এককথায় নারীদের জরায়ু মহান আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি। এই জরায়ুর মধ্যেই মহান আল্লাহ তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষকে নিপুণ শৈল্পিক রূপ দেন। পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে মানুষ! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দেহে থাকো তবে নিশ্চয়ই জেনে রেখো, আমি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি, তারপর শুক্র থেকে, তারপর আলাকা থেকে, তারপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট অথবা অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট গোশত থেকে। তোমাদের কাছে বিষয়টি সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করার নিমিত্তে। আর আমি যা ইচ্ছা করি, তা একটি নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত মাতৃগর্ভে অবস্থিত রাখি। অতঃপর আমি তোমাদের শিশুরূপে বের করি, পরে যাতে তোমরা যৌবনে উপনীত হও। তোমাদের মধ্যে কারো কারো মৃত্যু দেওয়া হয় এ বয়সেই, আবার কাউকে কাউকে ফিরিয়ে নেওয়া হয় হীনতম বয়সে, যাতে সে জ্ঞানলাভের পরও কিছু না জানে। তুমি জমিনকে দেখতে পাও শুষ্কাবস্থায়, অতঃপর যখনই আমি তাতে পানি বর্ষণ করি, তখন তা আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং উদ্গত করে সব ধরনের সুদৃশ্য উদ্ভিদ।’ (সুরা হজ, আয়াত : ৫)
আল্লাহপ্রদত্ত এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ কেটে ফেলে দেওয়া বা ফেলে দিতে বাধ্য করা কোনো মানুষের কাজ হতে পারে না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা সংগত কারণ ছাড়া সেই প্রাণ হত্যা কোরো না, যা আল্লাহ হারাম করেছেন। যে অন্যায়ভাবে নিহত হয় আমি অবশ্যই তার অভিভাবককে ক্ষমতা দিয়েছি। সুতরাং হত্যার ব্যাপারে যে সীমা লঙ্ঘন করবে না; নিশ্চয়ই সে হবে সাহায্যপ্রাপ্ত।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৩)
এ আয়াতে মহান আল্লাহ সংগত কারণ ছাড়া গর্ভের সন্তান হত্যার ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কেউ যদি সন্তান প্রজননের ক্ষমতাই চিরতরে নষ্ট করে দেয়, তাহলে তা কত বড় অপরাধ হবে, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন।
তবে হ্যাঁ, সংগত কারণ যেমন—অসুস্থতার বিষয়টি ভিন্ন। যদি কোনো নারী এমন রোগে আক্রান্ত হন, যে তাঁর জরায়ু ফেলে না দিলে তাঁর মৃত্যুর আশঙ্কা আছে, সে ক্ষেত্রে কোনো দ্বিনদার চিকিৎসকের পরামর্শে জরায়ু অপসারণ করার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু চাকরির জন্য, জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য এমনটি করা সম্পূর্ণ হারাম। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৮/৩৪৭)
মহান আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।