ডেস্ক নিউজ : মহান আল্লাহ মানুষের জীবিকা নির্বাহের যাবতীয় উপকরণ এ পৃথিবীতে রেখে দিয়েছেন। মানুষ যেন প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে পারে, সে জন্য তিনি মানুষকে মেধা ও বিবেকশক্তি দিয়েছেন। কিন্তু তিনি পৃথিবীতে এমন হাজারো প্রাণী সৃষ্টি করেছেন, যাদের বিবেকশক্তি দান করেননি। তবু তাদের জীবিকা থেকে বঞ্চিত করেননি। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি (আল্লাহ) তোমাদের জন্য পৃথিবীতে জীবিকার ব্যবস্থা করেছি, আর তোমরা যাদের জীবিকাদাতা নও তাদের জন্যও (জীবিকার ব্যবস্থা করেছি)।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ২০)
দুনিয়ার নিয়ম অনুযায়ী, মানুষ একে অন্যের অর্জিত জীবিকা আহার করে থাকে। পরিবারের সবাই উপার্জনক্ষম হয় না। সবাই উপার্জন করে না। কিন্তু কেউ পানাহারমুক্ত থাকে না। একজনের অসিলায় অন্যজন আহার করে। সৃষ্টিজগতে আল্লাহর নিয়ম হলো, সবাই সমান রিজিক ভোগ করে না। আল্লাহ তাআলা নিজ বান্দাদের পরীক্ষা করার জন্য রিজিক বৃদ্ধি বা হ্রাস করেন। রিজিক বৃদ্ধি আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রমাণ নয়, অনুরূপভাবে রিজিকের সংকীর্ণতাও তাঁর অসন্তুষ্টির কারণ নয়। রিজিকের এই হ্রাস-বৃদ্ধি পরীক্ষাস্বরূপ। আল্লাহ বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব, কখনো ভয়-ভীতি, কখনো অনাহার দিয়ে, কখনো তোমাদের জীবন-সম্পদ ও ফসলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। (এমন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করতে হবে) তুমি ধৈর্যশীলদের (জান্নাতের) সুসংবাদ দান করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৫)
মানব-দানব, পশু-পাখির জন্য জমিনে রয়েছে অফুরন্ত রিজিক। পৃথিবীতে মানুষ না খেয়ে মারা যায় সুষম বণ্টনের অভাবে। অন্যথায় পৃথিবীতে রিজিকের কমতি নেই। প্রতিনিয়ত নতুনভাবে দানা-পানি উৎপাদিত হয়। সৃষ্ট জীব তা থেকে আহার করে। এ ধারা চলমান। সৃষ্ট জীবের সুবিধার্থেই পৃথিবীর প্রয়োজনমাফিক পর্যায়ক্রমে তা দান করেন। এদিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে, ‘আমারই কাছে আছে প্রত্যেক বস্তুর ভাণ্ডার। আমি তা পরিজ্ঞাত পরিমাণে সরবরাহ করে থাকি।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ২১) একজন মানুষ জন্মের আগেই তার রিজিক বণ্টন হয়ে যায়। একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করে রিজিক লিখে দেওয়া হয়। (বুখারি, হাদিস : ৩০৮৭)
স্বভাবগতভাবে মানুষের মধ্যে তাড়াহুড়া করার প্রবণতা আছে। সে দ্রুত সব কিছু পেতে চায়, সব কিছু ভোগ করতে চায়। কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম হলো, নির্ধারিত সময়ে ধীরে ধীরে জীবনোপকরণ হাতে আসে। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, নির্ধারিত জীবিকা আসবেই। কেউ তার রিজিক ভোগ না করে মৃত্যুবরণ করবে না। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘হে মানুষ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। ধনসম্পদ সংগ্রহে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো। কেননা কেউ তার রিজিক পরিপূর্ণ না করে মৃত্যুবরণ করবে না, যদিও তা অর্জনে বিলম্ব হয়।’ (সহিহ আত-তারগিব, হাদিস : ১৭০২)
করোনাকালে বহু মানুষ জীবিকা নিয়ে চিন্তিত। মনে হচ্ছে, এই বুঝি শেষ! বোধ হয় না খেয়ে থাকতে হবে! চাকরিটা না থাকলে, ব্যবসা না থাকলে খাবো কী! অথচ আমরা একটু চিন্তা করে দেখি না, যখন জীবিকা উপার্জনে অক্ষম ছিলাম, তখনো মহান আল্লাহ আমাদের জীবিকার ব্যবস্থা করেছেন। কখনো কি আমরা চিন্তা করে দেখেছি যে আমাদের সাড়ে তিন হাত দেহে মহান আল্লাহ কত লাখো-কোটি মানুষের জীবিকা রেখে দিয়েছেন! মাথার টুপি বানিয়ে কত মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। চুল কেটে হাজারো মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। মুখ ফর্সা করে (পার্লার ব্যবসায়) কত মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। শেভ করিয়ে কত মানুষের জীবিকা হয়। কাপন বুনন, রং করা, ব্যবসা করা ও সেলাই করার মাধ্যমে লাখো মানুষের রিজিকের ব্যবস্থা হয়। জুতা তৈরি করে কত মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা হয়। জুতা পলিশ করে কত মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা হয়।
পৃথিবীতে বহু অর্থনীতিবিদ আছেন, বহু সুপারকম্পিউটার আছে, কিন্তু কেউ আজ পর্যন্ত এমন কোনো পরিসংখ্যান দেখাতে পারেনি যে মহান আল্লাহ কত অগণিত উৎস থেকে মানুষের রিজিকের ব্যবস্থা করেন। কাজেই আপনার-আমার সবার রিজিক আছে। কিন্তু আপনাকেই আপনার রিজিক খুঁজে নিতে হবে। কিছু মানুষের রিজিক থাকে সাগরের তলদেশে। তারা হলো ডুবুরি। সেখান থেকে তারা তাদের জীবিকা সংগ্রহ করে। কিছু মানুষের জীবিকা শূন্যে ঝুলন্ত থাকে। সেখান থেকে তারা তাদের জীবিকা সংগ্রহ করে। তারা হলো বিমানচালক। মানুষের আনন্দঘন মুহূর্ত হলো বিয়ে। স্বামী-স্ত্রীর মহামিলনের ভেতর থেকে কত হাজার কাজি ও বিবাহ রেজিস্ট্রারের জীবিকার ব্যবস্থা হয়। কেউ মারা গেলে আপনজনের কষ্ট হয়। এই কষ্টের ভেতর থেকে মহান আল্লাহ কিছু মানুষের জন্য জীবিকার ব্যবস্থা করেছেন। দাফন-কাফন ও কবর তৈরির মাধ্যমে কত মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা হয়।
তাহলে আপনার জীবিকাও জমিনে আছে। কিন্তু আপনাকেই তা খুঁজে নিতে হবে। আরো একটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার। সেটি হলো, বর্তমান সময়ে জীবিকা নিয়ে হতাশার অন্যতম কারণ হলো এক পেশার ওপর নির্ভরশীলতা। একটিমাত্র আয়ের উৎস হলে জীবিকা নিয়ে টেনশন হওয়া স্বাভাবিক। কেননা পৃথিবীর কোনো কিছু স্থায়ী নয়। ব্যবসায় মুনাফা স্থায়ী নয়। শহরে বাড়ি করতে পারলেই যে আপনার জীবিকার সমস্যার সমাধান হবে—এমনটা নাও হতে পারে। কাজেই বিকল্প পেশা, পার্টটাইম জব, একাধিক জীবিকার উৎস থাকা জরুরি। এমনকি ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে পেশা বদল হতে পারে। আর এর জন্য তাকদিরের ওপর বিশ্বাসের পাশাপাশি তদবির (কর্মপস্থা নির্ধারণ) লাগবে।
ইনশাআল্লাহ, জীবিকার অভাব হবে না।