রাব্বি আহমেদ মেহেরপুরঃমেহেরপুরেরগাংনী উপজেলার বামন্দী কৃষিব্যাংকে দালালদের দৌরাত্ম্য চরমে উঠেছে। এদিকে বিপাকে পড়েছে সাধারণ কৃষক। দালাল চক্রের সাথে জড়িত ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে দাবী ব্যাংকের ম্যানেজার আক্তারুজ্জামানের।
রবিবার মেলা ১২ টা বেজে ১৫ মিনিট। আমার একজন কাছের বন্ধুর একটি মর্গেজ লোন এর ব্যাপারে কথা বলার জন্য যায় ব্যাংকে। সাথে ছিল বন্ধুর স্ত্রী, মা এবং আমার সহকর্মী রাকিবুল ইসলাম কবি।
৩৩ শতাংশ জমির দলিলসহ অন্যান্ন কাগজপত্র সাথে নিয়ে গেলাম ম্যানেজারের রুমে। ম্যানেজার একটি টেবিল দেখিয়ে বললেন উনার কাছে কাগজপত্র দেখান। উনি ছিলেন সিনিয়র অফিসার খালিদ মাহমুদ। উনি সমস্ত কাগজপত্র দেখে বললেন যার কাছ থেকে জমি কিনেছেন তার ওয়ারিশ পত্র লাগবে এবং বললেন এই দলিলে ৩০ হাজার টাকার বেশি লোন দেওয়া যাবে না।
কিন্তু আমার আরো বেশি লোনের প্রয়োজন। আমরা মিডিয়াতে কাজ করি জেনে উনি আর কথা না বাড়িয়ে ম্যানেজারের সাথে আলাপ করতে বললেন। আমরা ফিরে গেলাম ম্যানেজারের কাছে। উনি সমস্ত হিসাব নিকাশ করে আমাদেরকে জানালেন এই দলিলে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার বেশী লোন দেওয়া যাবে না। কিন্তু আমার লোনের প্রয়োজন ছিল ২ লক্ষ বা তারও বেশি। বাহিরে আসলাম ভালো করে চিন্তা ভাবনা করার জন্য।
বাহিরে আসার পর পরেই খেলা শুরু হয়ে গেল।
ভদ্রবেশি একজন লোক সাহায্যের জন্য ডাকলেন। তিনি জানতে চাইলেন ম্যানেজার কি বললেন? আমি বিস্তারিত বললাম। উনি শোনার পর বললেন এখানে দালাল রয়েছে তাদের কিছু খরচ পাতি দিলে তারা বেশি লোনের ব্যবস্থা করে দিবে। আমি কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইলাম, কোথায় তারা?
তিনি রঞ্জিত নামের একজন কে ডেকে বিষয়টি বললেন। সব শুনে তিনি ধমক দিয়ে বললেন এই হচ্ছে আপনাদের দোষ আপনারা কিছু না বুঝেই স্যারের কাছে যান। এখন আর হবে না, কয়েকদিন পরে আসেন কাজ করে দেবে বলে জানালেন। এরপর আর বুঝতে বাকি রইল না। কৌশলে মোবাইলের রেকর্ডার অন করে রাখলাম। জানতে চাইলাম কত খরচ লাগবে। উনি বললেন হাজার দশেক টাকা হলেই সব কমপ্লিট করে দেবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল রঞ্জিতের বাড়ির তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামে।
সেই প্রথম ভদ্রবেশি লোকটি আবার বললেন এখানে আরো একজন রয়েছে যার নাম ইনা মালিথা। আমরা তাকেও ডাকতে বললাম। তার সাথে সব কথা বলার পর সেও এই কাজ করে দেওয়ার জন্য রাজি হলেন। তার কাছেও খরচের বিষয়টি জানতে চাইলাম তিনি বললেন ব্যাংকের খরচসহ সবাইকে দিয়ে মোট ১০ হাজার টাকা হলেই হবে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম তিনি তেরাইল গ্রামের বাসিন্দা এনামুল মালিথা।
আর বুঝতে বাকি রইল না এই অফিসের আরো অনেকে জড়িয়ে আছে এই দালাল চক্রের সাথে। আমরা প্রথমে ব্যাংকে ঢুকে তাদেরকে যেভাবে এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ঘোরাফেরা করতে দেখলাম, বিভিন্ন ফাইল নিয়ে ছোটাছুটি করতে দেখলাম তাতে করে মনে হচ্ছিল তারা এই অফিসের কর্মচারী।
সবার সাথে তাদের খুব ভাব লাভ দেখলাম। যেখানে ফাইল রাখা রয়েছে তাদেরকে দেখলাম সেখান থেকে খুঁজে খুঁজে ফাইল বের করছে এবং টেবিলে টেবিলে নিয়ে গিয়ে স্বাক্ষর করে নিচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনেকেই জানালেন ব্যাংক চলাকালীন সময়ে সারাক্ষণ তারা ব্যাংকেই থাকেন এবং গ্রাহকদের দালালি করেন। পরে আমরা ব্যাংকের ম্যানেজার আক্তারুজ্জামান এর সাথে কথা বলি এবং এ বিষয়ে জানতে চাই।
তিনি আমাদেরকে জানান এই ব্যাংকে তিনি একমাস হলো যোগদান করেছেন। এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এখন জানার পর তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলেও আমাদেরকে জানান। তবে রঞ্জিতের এই ব্যাংকে সিসি লোন রয়েছে বলেও জানান কিন্তু প্রতিদিন কেন সে আসেন এ বিষয়ে তিনি জানেন না।
ব্যাংক থেকে বেরিয়ে বাইরে এসেই আরও দুটি তথ্য আমাদের সামনে হাজির হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাঠপাড়া করমদি গ্রামের একজন কৃষক জানান সে একটি লোনের ব্যাপারে যোগাযোগ করেন এবং তার কাগজপত্র ভুল হয়েছে বলে তাকে লোন দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে দালালদের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা দিয়ে তিনি লোন নিয়েছেন।
মটমুড়া গ্রামের একজন বর্গাচাষী লোন নিতে গেলে তাকে লোন দেওয়া যাবে না বলে ফিরে দেয় ম্যানেজার আক্তারুজ্জামান। পরে ওই দালালদের একজন তাকে বলে কিছু খরচ পাতি দিলে লোনের ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে। তারা আরো বলে স্যার তো আর নিজের হাতে টাকা নিবেন না এটা বুঝতে হবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, যারা এর সাথে জড়িত তাদের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।