প্রত্যেক পেশাজীবী ব্যক্তি তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন। যত বিপদই আসুক না কেন তিনি তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা করতে পারেন না। পেশার ধরণ যা-ই হোক না কেন, মনে রাখতে হবে- প্রতিটি পেশাই সেবামূলক। দেশ জাতি বা সমাজে কোন বিপর্যয় দেখা দিলে সেক্ষেত্রে কারো নিস্ক্রিয় থাকা শোভনীয় নয়। করোনা মহামারীতে চিকিৎসক,স্বাস্থ্যকর্মী, সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং মিডিয়াকর্মীরা যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তার তুলনা হয়না। ইতোমধ্যে অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশ কনস্টেবল, স্বেচ্ছাসেবী ও মিডিয়াকর্মী (সাংবাদিক) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং অনেকে শাহাদাত বরণও করেছেন।
বর্তমান বিশ্ব করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে এই ভাইরাস প্রথম আবিস্কৃত হয়। ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটে চীনে। গত ৪ মাসে সারা পৃথিবীতে করোনায় আক্রান্ত সানুষের সংখ্যা ১ কোটির উপরে। আর মৃতের সংখ্যা ৬ লাখের উপরে। ১৯ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২ লাখ ৫ হাজার আর মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৬শ’ ১৮। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। তারপরের স্থান ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারতসহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেক ধণাঢ্য দেশ। অপ্রিয় হলেও সত্যটা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিস্কৃত হয়নি।
নানা ভাওতাবাজী আর চাপাবাজী করে কালক্ষেপণ করে নিরীহ ও অসহায় মানুষের জীবন বিপন্ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা, শিল্পপতি, আমলা, চিকিৎসক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ মারা যাচ্ছে। এ মৃত্যুর মিছিল ক্রমশ: উর্ধ্বমূখী। করোনাভাইরাসকে মোকাবেলা করতে গিয়ে অনেকে আক্রান্ত না হলেও অসুস্থ্য হয়ে শয্যাশায়ী রয়েছেন। আতঙ্কের মাঝে কালাতিপাত করছে তাদের পরিবার। এ খবর অনেকে জানেন না।
আমি আমার কথাই বলতে চাই। আমার বর্তমান বয়েস ৬৪ বছরের কাছাকাছি। ডায়াবেটিসের উপদ্রব তো রয়েছেই। অনেক নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। তারপরও আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে মাঠে কাজ করছি। তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে ফিচার লিখছি। রিপোর্ট বানিয়েছি। প্রিন্ট মিডিয়া আর অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশ করেছি। এসব ফিচার বা রিপোর্ট তৈরী করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। ইতিহাসের পাতা থেকে করোনাভাইরাসের সারমর্ম খোঁজে বের করতে হয়েছে এবং তা পাঠককে জানান দিতে হয়েছে।
‘করোনাভাইরাসের কবলে বিশ্ব’ আমার প্রথম লেখা ফিচার প্রকাশিত হয় ১৬ এপ্রিল’২০। যথাক্রমেÑ শ্যামলবাংলা২৪ডটকম, শেরপুরপ্রতিদিন, নতুনযুগ, শেরপুরের আলো, পল্লীকন্ঠ প্রতিদিন, জামালপুর দিনকাল, দৈনিক ঢাকা রিপোটর্, দৈনিক সবুজ এবং সর্বশেষ ‘কালের ডাক’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় লেখা ‘শেরপুরে চলছে লকডাউন: ত্রাণ তৎপরতা আশানুরূপ নয়: সাংবাদিকদের জন্য ঝুঁকিবীমা প্রদানের দাবি’ ফিচারটি ২১ এপ্রিল প্রথম প্রকাশিত হয়। ২৩ এপ্রিল প্রকাশিত হয় ‘করোনার মাঝেও সরেজমিন পর্যবেক্ষণে গেলাম’ আমার রচিত ফিচারটি। এসব ফিচারে করোনাকালে চলমান অবস্থার সঠিক চিত্র তুলে ধরেছি। নতুন যুগ পত্রিকার সম্পাদক ফিচারটি পোস্ট করেও পরে উর্ধতন মহলের চাপে ফিচারটি প্রত্যাহার করে নেন। তবে শেরপুরপ্রতিদিন ও শেরপুরেরআলো ফিচারটি প্রত্যাহার না করে বস্তুনিষ্ঠতার পরিচয় দিয়েছে। এজন্য কর্তৃপক্ষদ্বয়কে সাধুবাদ জানাই।্
টুকড়ো সংবাদ তো নিয়মিতই করে যাচ্ছি। আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এমনকি প্রশাসনিক উদ্যোগেও স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কাটার রিপোর্ট করেছি। আমি যে জেলায অবস্থান করছি সে জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উল্লেখ করে রিপোর্ট করে যাচ্ছি। পুলিশ প্রশাসন আর জেলা প্রশাসনের তৎপরতার রিপোর্টও করে আসছি। অর্থাৎ আমরা পরস্পরের সেতুবন্ধ রচনা করে এই আপদকালীন সময়কে সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করে যাচ্ছি। তবে আমি মাঝেমধ্যে অসুস্থও হয়ে পড়ছি।
গরম আমি একদমই সহ্য করতে পারিনা। ডায়াবেটিসের জন্য খাদ্যবিধি মেনে চলার কথা থাকলেও তা মানা সম্ভব হয়না। কদ্দিন আগে অনেক কাঁঠাল আর আম খেয়েছিলাম। পরিদিন আর বিছানা থেকে উঠতে পারছিলাম না। বিছানায় শুয়েই কাটালাম ১৫/১৬ দিন। ডায়াবেটিসের মাত্রা অনেক বেড়ে গিয়েছে। ভয় পেয়ে গেরাম আবার করোনায় ধরলো কি’না। সেদিন দু’বার বমি করেছি। তারপরও শরীর ঠিক হয়নি। দুর্বল শরীর নিয়ে বাসা থেকে আর বেরুতে পারিনি। এর মাঝে কবি জয়নাল আবেদীন তাঁর কবিতার পান্ডুলিপি দিয়ে গেছেন। পান্ডুলিপিটি দেখে দিতে হবে। সিনিয়র বলে কথা। আমি তো কাউকে না করতে পারিনা। গত বছর আমার বই বের করতে গিয়ে অন্য একজন কবির বই বের করে দিলাম। এবার যদি বই বের করতে না পারি তাহলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
প্রিয় পাঠক, কালের ডাক কর্তৃপক্ষের অনুরোধে আর নীরব থাকতে পারলাম না। বিশেষ করে সঞ্জীব চন্দ বিল্টুর মোবাইল অত্যচার আমাকে বাধ্য করেছে এ লেখাটি লিখতে। এর আগের সংখ্যার জন্যও বিল্টু আমার কাছে লেখা চেয়েছিলো। অসুস্থতার কারণে লেখা দিতে পারিনি। বিছানায় শুয়ে বসে একমাত্র ছেলে ইলহামের কম্পিউটারে লেখাটি কম্পোজ করতে হলো। কি লিখতে গিয়ে কি লিখে ফেলেছি, বলতে পারবোনা।
সবশেষে করোনার ভয়াবহতার কারণে যখন লকডাউন চলছিল তখন ‘কবি সংঘ বাংলাদেশ’র পক্ষ থেকে আমরা শেরপুর পৌরসভার সবচেয়ে অবহেলিত দক্ষিণ মোবারকপুর মহল্লায় দারিদ্র্যপীড়িত ৩০ জন অসহায় নারী-পুরুষের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান করি। এসময় উপস্থিত ছিলেন কবি সংঘ বাংলাদেশ’র সভাপতি (আমি) তালাত মাহমুদ, কার্যকরী সভাপতি রফিকুল ইসলাম আধার, সাধারণ সম্পাদ ড. আবদুল আলীম তালুকদার, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ডা: হাফিজুর রহমান লাভলু সহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ, ব্যবসায়িক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ সহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। প্রিয় পাঠক, যেখানেই থাকুন, যেভাবেই থাকুন, ভালো থাকবেন, সাবধানে থাকবেন সবসময়।
লেখক: কবি সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট এবং কবি সংঘ বাংলাদেশ’র সভাপতি।