মঙ্গলবার, ৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ আমার বাবার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী বাবার মৃত্যু বার্ষিকীতে বাবাকে নিয়ে আমার কিছু কথা

বাবা, তুমি আছো অস্তিত্বজুড়ে
কেমন আছ তুমি? কোথায় আছ তুমি? শুনেছি মানুষ মারা গেলে তারা হয়ে যায় কিন্তু তুমি-তো তারা হওনি। যদি তারা হতে তবুও তোমায় দেখতে পেতাম কিন্তু তোমাকে-তো আমি দেখতে পাইনা। বলতে পারিনা তোমার জন্য আমার বুকের গহীনটায় কেমন পুড়ে দিবারাত্রি। আচ্ছা, তুমি কি আমায় দেখতে পাও?
এই মাসে তুমি শুধু আমাদেরকেই নয় সমন্ত পৃথিবীকেই বিদায় জানিয়েছ। সকল মায়াজাল ছিন্ন করেছ। আচ্ছা সত্যিই কি তুমি আমাদের ছেড়ে যেতে চেয়েছিলে? মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও কি আমাদের চেহারা ভেসে উঠেছিল? তুমি মারা যাবার আগে কি যেন বলতে চেয়েছিলে বাবা? তা বুঝতে পারেনি। তখনও কি তুমি আমাদের নাম ধরে ডাকছিলে শেষ দেখা দেখার জন্য? মৃত্যু যন্ত্রনা কি খুব বেশি? খুব জানতে ইচ্ছা করে।
তুমি সেদিন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলে তাই অনেক কিছুই দেখতে পাওনি।
২০১৯সালের ৮ আগস্ট ঠিক এই দিনে  না ফেরার দেশে চলে গেলেন আমার বাবা ।। দেখতে দেখতে ১ বছর পেরিয়ে গেল ।।  ৪৮ বছর বয়সে আমাদের ছেড়ে চলে যান ।সেদিনেই বুঝেছি বাবাকে হারানোর শোকটা কতটা কষ্টের ।বিশ্বাস হচ্ছিল না আমার। সেই সময়টা মনে পড়লে দমবন্ধ হয়ে আসে । বাবাকে হারিয়ে আমি পাথর হয়ে গেছিলাম ।
 জীবন চলার পথে সৎ ভাবে বেচে থাকার জন্য অনেক কিছুই করেছেন।।। কিন্তু কোন দিন অসৎ কোন কাজে জড়িত ছিলেন না।। সদাহাস্যমুখ মিশুক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন আমার বাবা।। তাই এলাকার প্রত্যেকটি মানুষই তাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করতেন ,মাথার উপর থেকে বট বৃক্ষের ছায়ার মতো এতোদিন যে মানুষটি আগলে রেখেছিল ।মাঝে মাঝে এমন একটা সময় সবার জীবনেই আসে যখন মানুষ সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, তখন কারো পরামর্শ খুব জরুরী হয়ে পড়ে । সে সময়ে পাশে দাঁড়ানোর মতো আদর্শ একজন মানুষ হল বাবা।।
স্বভাবগত গাম্ভীর্যের জন্য বাবার সাথে সবার ঘনিষ্ঠতা একটু কম থাকে। কিন্তু সে মানুষের আমাদের প্রতি ভালোবাসার কোন ঘাটতি থাকে না।
একেকটা দিন বড় একা লাগে, বাবার স্পর্শটুকু, বাবার সেই মায়াভরা ডাক অথবা মাথায় হাত ভুলিয়ে দেয়া। বাবা থাকতে ভাবতাম, বাবা যদি না থাকেন, তবে আমি কিভাবে থাকবো ! বাবা নেই আজ ১ বছর, বাবাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো এ কখনো কল্পনা করিনি, কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন। কেটে যাচ্ছে একেকটি দিন, মাস আর একেকটি বছর – বাবা নেই, আছে বাবার অনেকগুলো স্মৃতি, অনেকগুলো কথা, যা ভুলতে পারিনা, ভোলা যায়না
বাবা, আজ তোমায় অনেক বেশি মনে পড়ছে। মনে পড়ছে পড়ালেখা রেখে খেলার জন্য যে মার দিতে, আদর করে যখন বাবা বলে ডাকতে, গোসল করিয়ে দিতে। তুমি কোথাও গেলে আমাকে নিয়ে যেতে। বাবা তোমার হাতে অনেকদিন কোন মার খাইনা, খুব ইচ্ছা হচ্ছে মার খেতে।
স্কুলে পড়াকালীন সময়ে বেতন দেবার যেদিন শেষদিন সেদিন তুমি আমায় স্কুলে পাঠিয়ে বলতে আমি এসে বেতন দেব। কিন্তু বলতে না আমার কাছে টাকা নেই। আমি ভয়ে থাকতাম যদি টাকা না জোগাড় করতে পার। অবশেষে ঠিকই এসে বেতন দিতে তুমি। আমি সেদিন ঠিকই বুঝতাম তোমার হাতে টাকা নেই বলে স্কুলে এসে বেতন দিতে কিন্তু কিছুই বলিনি।
জানি বাবা তুমি আর ফিরে আসবে না। অকারণে তবু কেন তোমাকে কাছে ডাকি। তুমি নেই আমাদের মাঝে অনুভব করতেই খুবই কষ্ট লাগে।
বলা যায়, লিখতে পারছিনা। লিখতে বসলেই অজস্র স্মৃতির ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছি আমি। মাথার ভিতর তোলপাড় করছে ঘটনা প্রবাহ। কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখব ভেবে পাচ্ছিনা। তাই বোধহয় এই লেখাটিতে তোমায় কোন সম্ভাষণ জানাতে পারলাম না। কারণ, তোমাকে কোন সম্ভাষণে সম্ভাষিত করবো আমি বুঝতে পারছিনা। যাই করি না কেন তা তোমার জন্য অতি নগন্য হয়ে যাবে।
জানো বাবা, তোমাকে নিয়ে বেঁচে থাকতে এভাবে তো লিখিনি তাই হাতটা কাঁপছে। ঠিকমত লিখতে পারছিনা।
এতদিন তোমাকে নিয়ে লিখিনি। কারণ আমি মনে করি আমার ভিতরেই তো বাবা আছে, আমিইতো বাবা। তাই বাবার কথা আলাদা করে লিখার কিংবা বলার দরকার পড়েনা। তবে জানো আজ তোমাকে নিয়ে খুব লিখতে ইচ্ছে করছে। প্রত্যেকটা সন্তানই বোধ হয় জীবনের একটা পর্যায়ে বাবাকে খুব মিস করে।
বাবার কথা খুব ভাবে। মনে হয় বাবা নামক সেই মানুষটা যদি এই মুহূর্তে আমার মাথায় তার অকৃত্রিম স্নেহের হাতটা বুলিয়ে দিতো সব সমস্যা যেন দূর হয়ে যেত। এখন আমি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছি বাবা। নিজের স্বপ্নের সাথে বাস্তবতার অনেক অমিল তা এখন বুঝতে পারছি। চারদিকে অজ্র মিথ্যার ভিড়ে একটা সত্যের পিছনে ছুটছি নিরন্তর। পৃথিবীতে এত মানুষ কিন্তু একজন মানুষই মিলেনা অকৃত্রিম ভালবাসা উপহার দেবার। আর ঠিক তক্ষুনি আমার মনে হয় তোমার কথা। অনেক আনন্দের মুহূর্তে যে মানুষটা অবিচল থেকে আমাকে স্মরণ করে দিয়েছে ভবিষ্যতের কথা। মাঝেমধ্যে তুমি যখন আমার উপর রেগে যেতে তখন বুঝতে পারতাম না বাবা, যে তোমার ঐ কঠিন মাথার ভিতরেও যে পরিমাণ ভালবাসা লুকায়িত ছিলো পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা জড়ো করলেও তার সমতুল্য হতে পারেনা।
আজ বাবার সাথে পথ চলার সময় গুলকে অনুভব করছি, চলার জীবনে বাবার ছায়াতেই বড় হয়েছি, বাবার ভালোবাসা, বাবার স্নেহ, বাবার আদর আজও আমার স্মৃতিতে সতেজ হয়ে ভাসে। আমার বাবা ছিলেন আমার আর্দশ। আজ বাবাকে আমার খুব প্রয়োজন ছিলো বাবার সাথে আমার অনেক কথা বলার ছিলো আমি বলতে পারিনি তাই মনের লুকানো কথাগুলো আজও কারো সাথে ভাগাবাগি করতে পারিনি। বাবার আর্দশ, বাবার সততা, বাবার নৈতিকতা আমার কাছে অতুলনীয়। যাদের বাবা আছে তারা জানেনা বাবার ছায়াটা কতটা তার সন্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ । বাবাহীন পৃথিবীটা বেশ অদ্ভুত ! যাদের বাবা নেই তারা কেবল জানেন বাবার অনুপুস্থিতিটা কেমন । এক সময় বাবার বুদ্ধিছাড়া কোন কাজেই সফল হওয়া যেতো না, আর আজ বাবাকে ছাড়া চলতে হচ্ছে প্রতিটা মুহূর্ত । বুদ্ধিহীন অবস্থায় চলতে হচ্ছে এই অচেনা জীবন শহরতলীতে। কিন্তু বাবার সেই স্মৃতি বাবার সেই উপদেশমূলক কথাগুলো আজও আমার অন্তরকে গভীরভাবে নাড়া দিয়ে যায়! যার আদর্শ আমাকে মানুষ হতে সাহায্য করছে।
সারা জীবন বাবাকে মিস করবো।। বাবার কথা মনে পরলে এখনো চোখে পানি চলে আসে।।
“” বাবা কত দিন, কত দিন- দেখিনা তোমায়”’ এ তো রক্তের সাথে রক্তের টান স্বার্থের অনেক উর্ধ্বে হঠাৎ অজানা ঝড়ে তোমায় হারালাম মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো বাবা কতদিন কতদিন দেখিনা তোমায় কেউ বলে না তোমার মত কোথায় খোকা ওরে বুকে আয়…………………….
আল্লাহ  পাক বাবাকে জান্নাত নসিব করুন।। আমিন।
লেখক:
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ মালয়েশিয়া পেনাং শাখার সম্মানিত
সভাপতি রায়হান জামিল ভূঁইয়া।

এই বিভাগের আরো খবর