বৃহস্পতিবার, ৭ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নরসিংদীর শিবপুরের ইউএনওর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার নরসিংদী সার্কিট হাউজে দিন ব্যাপী ইউএনও’র বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের পরিচালক এম ইদ্রিস সিদ্দিকী (যুগ্ম-সচিব, স্থানীয় সরকার)। এসময় শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: হারুনুর রশীদ, ভাইস চেয়ারম্যান শরীফ সরোয়ার ভূঞা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাপসী রাবেয়া, দুলালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো: মেরাজুল হক, সাধারচর ইউপি চেয়ারম্যান মো: মাছিহুল গণি স্বপন, মাছিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হারিস রিকাবদার, পুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার হাসান উল সানি এলিছ, চক্রধা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো: বেনুজির আহমেদ, জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান মো: নাদিম সরকার, বাঘাব ইউপি চেয়ারম্যান মো: তরুন মৃধা, যোশর ইউপি চেয়ারম্যান মো: রাসেল আহমেদ, আইয়ূবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো: মজিবুর রহমান সরকার, সংরক্ষিত সদস্য যথাক্রমে তাছলিমা খানম, বিলকিস রানী, আফিয়া বেগম, শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আরম ভূঞা রাখিল, ইউএনও অফিসের কর্মচারী জাকির হোসেন এবং ১৬ জন ঠিকাদারসহ মোট ৩২ জনের বক্তব্য শুনেন তদন্ত কর্মকর্তা।
অভিযোগকারীরা বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার হুমায়ুন কবির শিবপুরে যোগদানের পর থেকে পরিষদের উন্নয়ন তহবিলের আওতায় পরিষদের সিদ্ধান্ত থাকা স্বত্বেও জনস্বার্থে কোন উন্নয়নমূলক কার্মকান্ড বাস্তবায়ন করেনি। বরং বিভিন্ন জটিলতা তৈরী করে উন্নয়নমূলক কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ নির্দেশিকা না মেনে নিজের ইচ্ছেমত নিম্ন মানের বাসগৃহ নির্মাণ ও অর্থ আত্মসাৎ করেন। ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থ বছরে হাট বাজার হতে প্রাপ্ত ইজারালব্ধ আয় ও ব্যয়ের হিসাব উপজেলা পরিষদের সভায় অদ্যাবদি উপস্থিাপন করেননি। তিনি আইন, বিধিমালা ও নীতিমালার কোনো তুয়াক্কাই করেন না। তিনি হাট-বাজার সমূহের ব্যবস্থাপনা, ইজারা পদ্ধতি এবং উহা হতে প্রাপ্ত আয় বন্টন সম্পর্কিত নীতিমালা অনুসরণ না করে গড়বাড়ী বাজার অস্থায়ী পশুরু হাট, সোনাকুড়া বাজার অস্থায়ী পশুর হাট, কামরাব বাজার অস্থায়ী পশুর হাট অনুমোদন প্রদান করে বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেন। উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তরের আওতায় বিশেষ বরাদ্দের টি.আর, কাবিখা ও অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নে ও শিবপুর পৌরসভার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনেও অবহেলা করেছেন। দাযিত্ব পালনের অবহেলা করায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর প্রায় ৩২ লাখ টাকার উন্নয়ন কাজের টাকা তামাদি হয়ে যায়।
এছাড়াও শিবপুর উপজেলার ঠিকাদারদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় যে, ১২ থেকে ১৫ ভাগ ঘুষ না দিলে ঠিকাদারী কাজের বিল ইউএনও আটকে রাখেন এবং উল্লেখিত ঘুষের টাকা পরিশোধের পর ঠিকাদারী বিল পরিশোধ করেন। তাছাড়া ঠিকাদারী লাইসেন্স প্রতিবছর নবায়ন করার পরও বৎসরে একটি মাত্র টেন্ডার পান। বাকী ৯০ভাগ কাজ গোপনে টেন্ডার বিহনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসককে নিয়ে কাজ করে থাকেন। এতে ঠিকাদাররা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। ছাড়াও তিনি পৌর প্রশাসক হিসেবেও শিবপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও লেক প্রকল্পটি প্রকল্প কমিটি টেন্ডারবিহীন বাস্তবায়ন করেন। আশ্রয়ন প্রকল্পের নামে ঠিকাদারদের নিকট সি ইট ও নগদ অর্থ দাবী করেন। যাহা কন্ট্রাকদারদের দেয়ার কথা নয়। টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ পাওয়ার পর প্রকল্প মূল্যের অতিরিক্ত কাজ ঠিকাদাদের মাধ্যমে করিয়ে অতিরিক্ত কাজের বিল প্রদান করতে অস্বীকার করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ূন কবিরের বিভিন্ন অনৈতিক ও দুর্নীতির বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো: হারুনুর রশীদ খান ৫টি অভিযোগ উত্থাপিত করেন।
এব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের পরিচালক এম ইদ্রিস সিদ্দিকী (যুগ্ম-সচিব, স্থানীয় সরকার) বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে তদন্ত চলাকালীন সময়ে ভিতরে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে না দিলেও আওয়ামীলীগ নেতা ফরহাদ আলম ও আসাদসহ বেশ কয়েকজনকে দিনভর সার্কিট হাউজের ভিতরে ঘুরা ফেরা করতে দেখা গেছে। একজন সরকারী কর্মকর্তা জানান,তারা ইউএনও’র পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিতে এসেছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
এদিকে সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সার্কিট হাউজে এই তদন্ত চলা কালে সরকারী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষদের নেতিবাচক বাচক কথাবার্তা বলতে শোনা গেছে।

এই বিভাগের আরো খবর