মঙ্গলবার, ১লা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মসলার বাজারে এবার ভিন্ন চিত্র

ডেস্ক নিউজ : করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চট্টগ্রামে গরম মসলার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কমেছে মসলার দাম। অন্য বছরগুলোতে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মসলার বাজার চড়া থাকলেও এবারের চিত্র একটু ভিন্ন। দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের মসলা ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে অন্য সব ক্ষেত্রের মতো জনজীবনেও স্থবিরতা নেমে এসেছে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় কোরবানির ঈদ নিয়ে খুব একটা আয়োজন এখনো নজরে আসছে না।

ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির ঈদ ছাড়াও চট্টগ্রামে বিয়ে-মেজবানসহ সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য মসলার বাজারে ক্রেতাদের যে ভিড় লেগে থাকত, করোনার কারণে সেসব আয়োজনও নেই। এ ছাড়া পরিবহন সমস্যার কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পণ্যের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। নগরের বাইরে পাশের জেলা-উপজেলাগুলোসহ প্রত্যন্ত এলাকায় আগে যেখানে পণ্য সরবরাহ হতো ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ সেখানে সেটা এখন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে।

কোরবানির ঈদে মসলার বাজারে কেনাবেচার সরগরম ভাব এবার তেমন নেই। অন্য সময় জিরা, লবঙ্গ, এলাচ, দারুচিনিসহ প্রায় সব মসলাপণ্যের চাহিদার সঙ্গে বাড়ে দামও। কিন্তু এবার করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে কোরবানির সময় দীর্ঘদিনের দাম বাড়ার রীতিতে ভাটা পড়েছে।

গত ১৩ মে সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে বৈঠক করে গরম মসলার দাম ১০ থেকে ২৫ ভাগ কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি। তারও একটা প্রভাব মসলার বাজারে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যান্য সময়ের মতো ঈদকে কেন্দ্র করে এবার দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।

পাইকারি বাজার থেকে যেসব পণ্য খুচরা বাজারে যাওয়ার কথা ছিল করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত লকডাউন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি দেখা গেছে। প্রায় কাছাকাছি বাজারগুলোতেই শুধু সরবরাহ চলমান রয়েছে। এ কারণে পাইকারি বাজারগুলোতে পণ্য জমে গেছে। একদিকে চাহিদা নেই, অন্যদিকে বেচাকেনাও নেই। এর পরেও চলমান পরিস্থিতিতে যদি ঈদে মসলার চাহিদা বাড়ে, তবুও দাম বাড়ার তেমন আশঙ্কা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যের একমাত্র পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে এসব পণ্যের দাম জিরা (ভারতীয়) প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৯০ টাকায়, ইরানি জিরা প্রতি কেজি ৩২০ টাকায়, দারুচিনি (চীন) ২৭০ থেকে ২৭৫ টাকা, দারুচিনি (ভিয়েতনাম) ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গোলমরিচ ৩৭০ টাকা, লবঙ্গ ৬৮০ টাকা, তেজপাতা ৮০ টাকা, ধনিয়া ৭০ টাকা, ভালোমানের ধনিয়া প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দামে। মিষ্টি জিরা প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এলাচ প্রতি কেজি ২৪০০ থেকে মানভেদে ২৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে এমনিতে বিয়েশাদি মেজবানসহ গরম মসলা ব্যবহৃত হয় এমন সামাজিক অনুষ্ঠান হচ্ছে না, নগরের হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ, সে কারণে মসলার বাজারে এখন মন্দা চলছে। এবার কোরবানিতেও মসলার বাজারে তেমন কোনো চড়া মূল্য নেই।

কারণ করোনাভাইরাসের কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণি আর্থিক সংকটে পড়েছে। বলা যায়, পকেট খালি। দেশের এই মধ্যবিত্ত শ্রেণিটাই প্রধানত কোরবানিদাতা। এবার যদি কোরবানি করেও সেটা ৩০ শতাংশের বেশি হবে বলে মনে হয় না। তারপর নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির যাঁরা অংশীদারের ভিত্তিতে কোরবানি করতেন তাঁরা এবার অনেকটা নেই বললেই চলে। এখন তাঁরা কোনোভাবে দিন পার করছেন। এসব মানুষ এখন হিসাব করে চলছেন। এসব কারণে এ বছর কোরবানি উপলক্ষে মসলার বাজারে ঝাঁজ কমেছে। এ ছাড়া কোরবানির মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে খাতুনগঞ্জ মসলার বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। তবে খুচরা দোকানে মূল্য একটু বাড়তি বলে আমাদের কাছে খবর আছে।

এই বিভাগের আরো খবর